অভিশাপের ভয়! ভোর হতে না হতেই একদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় গোটা গ্রাম - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 30 August 2023

অভিশাপের ভয়! ভোর হতে না হতেই একদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় গোটা গ্রাম

 


অভিশাপের ভয়! ভোর হতে না হতেই একদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় গোটা গ্রাম



প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ৩০ আগস্ট: উত্তরপ্রদেশে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে প্রতি তিন বছর পর পর ভোরবেলায় গ্রামের লোকেরা একদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে যায়। গ্রামের সিওয়ানে দিনভর পুজো হয়। সন্ধ্যার পর গ্রামবাসী তাদের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেটি হল মহারাজগঞ্জ জেলার বেলওয়া চৌধুরী গ্রাম। সিসওয়া ব্লকের এই গ্রামটি এখন সিসওয়া পৌরসভার অন্তর্গত। এই গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবার, এক দিনের নবজাতক থেকে বয়স্ক সদস্য পর্যন্ত, এই বিশেষ দিনে গ্রাম ছেড়ে যায় এবং সারা দিন বাইরে সিওয়ান, মন্দির এবং পঞ্চায়েত ভবনে কাটায়। এমনকি পশুরাও গ্রামে থাকে না।


প্রতি তিন বছর পর যেদিন এই গ্রামের মানুষ সারাদিনের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যায়, সেই দিনটিই বৈশাখ পূর্ণিমার বিশেষ তিথি। এটিকে গ্রামবাসীরা পার্বণ পর্ব বলেন। প্রতি তিন বছর অন্তর বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনে, তাদের পুরো পরিবারকে রক্ষা করার জন্য, গ্রামবাসীরা একদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে সারা দিন গ্রামের সিওয়ানে থাকে। প্রায় একশ বছর ধরে এই গ্রামে চলে আসছে এই ঐতিহ্য।


এই ঐতিহ্য সম্পর্কে গ্রামসভার বাসিন্দা কিষাণ আদর্শ ইন্টার কলেজের ব্যবস্থাপক সুরেন্দ্র মল্ল বলেন, প্রবীণদের মতে প্রায় একশো বছর আগে কুশিনগর জেলার বাঘি কুটি থেকে এক সাধু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে এখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এদিকে তার দল গ্রামের বাগানে থামে এবং খাবার-জলের ব্যবস্থা করতে থাকে। এ জন্য তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে কাঠ চেয়েছিলেন। কাঠ না পেয়ে সাধুদের দল শস্যের জন্য বাগানে পুঁতে রাখা মেহ (খুঁটি) উপড়ে ফেলে নিজেদের ভাণ্ডার তৈরি করে খাবার খায়।


উপড়ে ফেলার কথা জানতে পেরে গ্রামবাসীরা আপত্তি জানায়। এতে সাধু রাগ হয়ে গ্রাম ধ্বংসের জন্য গ্রামবাসীদের অভিশাপ দেন। সেকারণে গ্রামের কিছু লোক সেই সময়ের উপাদেয়তা দেখে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করেন। এতে সাধু তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত করে বলেন, গ্রামবাসীরা যদি প্রতি তিন বছর পর পর আজকের তিথিতে অর্থাৎ বৈশাখী পূর্ণিমার দিন সারাদিন গ্রামের বাইরে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যায়, তাহলে অভিশাপ থাকবে না।


গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্র মাল্লা ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা জানান, অভিশাপের সময় গ্রামবাসী অনেক ক্ষমা চেয়েছিল। এ নিয়ে সাধুরা যাওয়ার সময় বলেন, 'গ্রামের সাধুরা মধু উপড়ে ফেলেছে। সেজন্য আজ থেকে মেহ ছাড়া এই গ্রামে দানওয়ারী করা হবে। সেই থেকে আজ অবধি এ গ্রামে বিনা পয়সায় দানওয়ারী হয়ে আসছে।'


সাধুদের অভিশাপের পরে, গ্রামবাসীরা প্রতি তিন বছর পর বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে সূর্যোদয়ের আগে জেগে ওঠেন, তাদের ঘরে তালা দেয় এবং গ্রামের বাইরে মাঠ, নর্দমা এবং বাগানে ক্যাম্প করে দিন কাটায়। সূর্যাস্তের পর তারা তাদের ঘরে ফিরে যায়। বাড়ির প্রধান ফটকে কর্পূর ও ছাই জ্বালিয়েই ঘরে প্রবেশ করেন মহিলারা।


শত বছর ধরে চলে আসা এই বিশেষ ঐতিহ্য ২০২০ সালে করোনার লকডাউনের কারণে ভেঙে যায়। ওই দিন বাড়ির উঠানে অবস্থান করে এই প্রথা মেনে চলেন গ্রামবাসীরা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad