স্কলারশিপ প্রকল্পে কেলেঙ্কারি! CBI-এর হাতে তদন্ত হস্তান্তর সংখ্যালঘু মন্ত্রকের
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ১৯ আগস্ট: কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু মন্ত্রকের তদন্তে স্কলারশিপ যোজনায় কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভুয়া মাদ্রাসা ও ভুয়া ছাত্রদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বৃত্তি উত্তোলন করা হয়েছে। মামলার তথ্য পাওয়া মাত্রই সংখ্যালঘু মন্ত্রক এর তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দেশের ১৫৭২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৮৩০টি প্রতিষ্ঠান শুধু কাগজে কলমে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ৫ বছরে ১৪৪.৮৩ কোটি টাকার বৃত্তি কেলেঙ্কারি হয়েছে। পাশাপাশি দেশে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার।
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে যে, প্রায় ৫৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই জাল বা নন অপারেটিভ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর জন্য, মন্ত্রক ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্চ (এনসিএইআর) থেকে করানো হয়েছে।
৮৩০টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। সূত্র মতে, মাদ্রাসা ও সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিশুদের এই বৃত্তি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একটি মোবাইল নম্বরে ২২টি শিশুর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। একইভাবে, কেরালার একটি জেলা মালাপ্পুরমে, গত ৪ বছরে ৮ লক্ষ শিশু বৃত্তি পেয়েছে।
আসামের নগাঁও-এর একটি ব্যাঙ্ক শাখায় একবারে ৬৬ হাজার স্কলারশিপ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল৷ একইভাবে কাশ্মীরের অনন্তনাগ ডিগ্রি কলেজের ঘটনাও সামনে এসেছে। কলেজে মোট ৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও জালিয়াতি করে নেওয়া হচ্ছে সাত হাজার শিক্ষার্থীর বৃত্তি।
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে, যখন পুরো বৃত্তি প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজ করা হয়েছিল, তখন কেলেঙ্কারির স্তরগুলি খুলতে শুরু করেছিল। ২০২২ সালে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে সংখ্যালঘু মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হলে, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে বড় আকারের তদন্ত শুরু হয়।
সূত্র জানায় যে, এটি ২০০৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা বৃত্তি হিসাবে জারি করেছে। এর মধ্যে গত চার বছর ধরে প্রতি বছর ২২৩৯ কোটি টাকা জারি করা হয়েছে।
দেশের ১২ লাখ ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় ৫ হাজারের বেশি শিশুর কাছে বৃত্তির টাকা যাচ্ছে। দেশে ১,৭৫,০০০ মাদ্রাসা রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২৭ হাজার মাদ্রাসাই রেজিস্ট্রার্ড, যা কিনা বৃত্তি নেওয়ার জন্য যোগ্য।
প্রথম শ্রেণী থেকে পিএইচডি পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি দেওয়া হয়। এর আওতায় ৪০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু হোস্টেল ছাড়া বসবাস করলেও তাদের নামে দেওয়া বৃত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে।
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক দ্বারা জারি করা বৃত্তি যদিও কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়, তবে এর শারীরিক যাচাইকরণ এবং প্রক্রিয়া রাজ্য সরকারের মেশিনারির ওপর নির্ভর করে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের জেলা ইউনিটে সংখ্যালঘু দফতরের অফিসে সমস্ত সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান রেজিস্টার্ড করা হয়।
স্থানীয় ব্যাংকে শিশুদের বৃত্তির অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শিশু আছে কি নেই। এর বাইরে ইনস্টিটিউট আছে কি নেই। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের বিভাগীয় আধিকারিকরাও এর যাচাইকরণ করেন। রাজ্য সরকার থেকে অনুমোদিত তালিকা কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রককে দেওয়া হয়। তারপর এখান থেকে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্কলারশিপ পাঠানো হয়।
No comments:
Post a Comment