রবিনসন স্ট্রিটের স্মৃতি! দাদার দেহ আগলে ৩ দিন বসে রইল বোন
নিজস্ব প্রতিবেদন, ২৫ আগস্ট, কলকাতা : দাদার মৃতদেহ তিনদিন ধরে আগলে রেখেছিল বোন। কলকাতার গড়ফা এলাকার কালিকাপুর মেইন রোডের বাসিন্দারা ওই এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার পর পুলিশকে খবর দেন। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গড়ফা থানার পুলিশ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল দাদার মৃতদেহের সামনে বসে আছেন মধ্যবয়সী বোন। ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শিবরাম বেহেরা। পঞ্চান্ন বছর বয়সী ওই ব্যক্তি উচ্চশিক্ষা বিভাগে পিয়নের চাকরি করতেন। তিন দিন আগে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। তার দেহ মেঝেতে পড়ে ছিল। তার মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
লালবাজার সূত্রে খবর, প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মৃতের বোন মানসিকভাবে অসুস্থ। অনেক আগেই বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইবোন একসঙ্গে থাকতেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখেননি তারা।
পুলিশ জানায়, দাদা শিক্ষা বিভাগে চাকরি করতেন, কিন্তু তাদের আর্থিক সমস্যা ছিল। এক প্রতিবেশীর কথায়, 'ভাই-বোন কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সাহায্য চাইতেন।
বৃহস্পতিবার পচা গন্ধ পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা থানায় খবর দেন। পরে গড়ফা থানা পুলিশ বাড়িতে গিয়ে ওই ব্যক্তির দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তবে নিহতের কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল কি না তা জানা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, শিবরামের কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গড়ফায় দেহ রাখার ঘটনা রবিনসন স্ট্রিটের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক বছরেরও বেশি সময় আগে, ভাই পার্থ ডে রবিনসন স্ট্রিটে দিদির মৃতদেহের যত্ন নিচ্ছিলেন। পরে তারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বিষয়টি সে সময় বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
একইভাবে কয়েক বছর আগে বৃদ্ধ বাবার দেহ তিন মাস আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি ঘটেছে গড়ফার গাঙ্গুলী পুকুর এলাকায়। তিন মাস বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখেছিলেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের নাম সংগ্রাম দে। তিন মাস তাকে দেখতে পাননি প্রতিবেশীরা। আকস্মিক নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এরপর স্থানীয় লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে যে তিন মাস আগে সে মারা গেছে এবং তার ছেলে তার শেষকৃত্য না করেই তার দেহ বিছানায় ফেলে গেছে। পুলিশকে খবর দিলে তারা জোর করে ঘরে ঢুকে দেহ উদ্ধার করে।
No comments:
Post a Comment