জানেন কি ডাক্তারদের হাতের লেখা এত খারাপ হয় কেন?
প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ২৭ আগস্ট: আপনি কি জানেন সমস্ত ডাক্তারদের হাতে লেখা এত খারাপ কেন হয়? কেন একজন দুজন ডাক্তার নয়, প্রত্যেকটা ডাক্তারেরই হাতের লেখা খুবই খারাপ হয়! এর পেছনে আসল ও অবাক করা রহস্য বা কারণটি ৯৯ শতাংশ মানুষই জানে না। শুনলে অবাক হবেন বছরে সাত থেকে আট হাজার মানুষ মারা যান ডাক্তারদের এই অতিরিক্ত খারাপ হাতের লেখার কারণে। তবুও কোনও ডাক্তার-ই তাদের হাতের লেখা কখনও সুন্দর করে না কেন জানেন? এই প্রতিবেদনে জেনে নিন এর পেছনের কয়েকটি কারণ।
ডাক্তারদের প্রতি প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, তাদের মধ্যে একটি হল হাতের লেখা নিয়ে। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন ডাক্তার বাবু যখন তার প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নাম লেখেন, তা বুঝতে গিয়ে আমাদের দাঁত ভেঙে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। আসলে তাঁরা কি লিখছেন শুধুমাত্র তারাই জানেন। অনেক সময় তাঁদের লেখা বুঝতে না পারার কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। হয়তো একজন ডাক্তারের লেখা খারাপ হতেই পারে তাই বলে সব ডাক্তারের হাতের লেখাই সমান? অনেকে মনে করেন হয়তো ডাক্তারদের চিকিৎসা করার জন্য অন্য একটা পদ্ধতি, যাতে রোগীরা তাদের লেখা বুঝতে না পারে। কিন্তু সেই রহস্যই উন্মোচিত হয়েছে; জানা গেছে ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হওয়ার কারণটা কি! সমস্ত ডাক্তারদের হাতের লেখা একদম খারাপ হওয়ার পেছনে আছে পাঁচটি দারুণ রহস্য বা কারণ। তাহলে জেনে নিন সেইসব কারণগুলো-
প্রথমত- ডাক্তারি পড়ার সময় যখন বিভিন্ন বিষয় প্রশিক্ষণ নেন, তখন বেশি বেশি সংকেত দিয়ে লেখা শেখানো হয়। যেমন- রোগী দেখার পর যখন কোনও ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখেন তখন শুধু ওষুধের সংক্ষিপ্ত নামটি লিখতে বলা হয়। এমনকি ওষুধের নাম বারবার লিখতে গেলে অনেক সময় বানানে গরমিল দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তাররা ওষুধের প্রথম লেটারটি বরাবর লিখে বাকি লেখাগুলো টানা দিয়ে রাখেন।
দ্বিতীয়ত- কিছু চিকিৎসকরা আছে তাদের চিকিৎসক হয়ে ওঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। মেডিক্যাল পড়াশোনায় অনেক পরীক্ষা হয় এবং পরীক্ষাগুলোতে অনেক কম সময় থাকে এবং অনেক বেশি লিখতে হয়। এর কারণে সেই পরীক্ষা শেষ করতে দ্রুত লেখার অভ্যাস করতে হয়। ধীরে-সুস্থে সুন্দর করে লেখার সময় তো থাকেই না, এই জন্য তাদের হাতের লেখা বড় অদ্ভুত দেখতে লাগে।
তৃতীয়ত- অনেক সময় দেখা যায় ওষুধের নামের বানান স্পষ্ট করে লিখলে অনেক সময় ওষুধ ক্রেতার সাথে ফার্মেসিতে বাকবিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়তে হয়। কারণ ফার্মাসির বিক্রয় কর্তা অনেকগুলো কোম্পানির ঔষধ রাখেন, ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই রকম কোম্পানির ওষুধের পরিবর্তে অন্য কোম্পানির ওষুধ লিখে দেয়। যেমন প্যারাসিটামলের অনেকগুলো নাম বা কোম্পানি রয়েছে। এক্ষেত্রে ওষুধের নাম লেখা আছে প্যারাসিটামল কিন্তু আপনাকে দিল প্যারাপাইডল, অথচ কাজ কিন্তু দুটোরই অনেকটাই সমান। কিন্তু অনেকটা সময় ক্রেতারা নিতে চান না। কারণ প্রেসক্রিপশনের ব্যতিক্রম নিয়ে ক্রেতারা আগ্রহী নন। তাই এসব দিক বিবেচনা করে ডাক্তাররা নাকি ইচ্ছা করে এমনটা লিখে থাকেন, যা অনেকের পক্ষে করা সম্ভব নয়, তাই তাদের হাতের লেখা সুন্দর দেখায় না।
চতুর্থত- কিছু ডাক্তার বলেন ডাক্তারদের মস্তিষ্ক নাকি একটু রাগী, ফলে তাল মেলাতে গিয়ে লেখার দিকে খেয়াল থাকে না। এটা একজন ডাক্তারের অভিমত।
পঞ্চমত- কিছু ডাক্তার আবার বলেন যে, আপনিও যদি দ্রুত লেখার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনিও খুব সহজে ডাক্তারদের হাতের লেখা বুঝতে পারবেন। তবে কিছু কিছু ডাক্তার বলেছেন, এমনটা করেও কোনও লাভ হবে না। একটা হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটা ডাক্তারকে প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১০০ টা পর্যন্ত রোগী দেখতে হয়। এত অল্প সময়ে এত রোগীর প্রেসক্রিপশন করতে হয় যে, ডাক্তারদের হাতের লেখার বেহাল দশা হয়ে যায়। আর পরবর্তীতে চেম্বার প্র্যাকটিস করার সময় যাদের রোগীর চাপ বেশি থাকে, তাঁদের লেখা বোঝা কঠিন হয়ে যায়।
এক রিপোর্টে দেখা গেছে ডাক্তারদের হাতের লেখা বাজে হওয়ার কারণে বিশ্বের প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ মারা যায়। কারণ অনেক সময় হাতের লেখা মেডিক্যাল স্টোরের মালিক বুঝতে পারেন না, তারা শুধু ডাক্তারের লেখা অনুযায়ী ওষুধ দেন। অনেক সময় ভুলও হয়ে যায়। ফলে ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র যারা অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট তারা একমাত্র প্রেসক্রিপশন দেখেই বুঝে যায় কি লেখা আছে। তারা খেয়াল করে প্রথমে দুটি অক্ষর।
যে যত বড় ডাক্তার, তার হাতের লেখা ততটাই খারাপ। এর কারণে অবশ্য স্পষ্ট। ভালো ডাক্তারের কাছে রোগীর সংখ্যা বেশি আর তাই তার হাতে সময় কম। যার কাছে রোগীর ভিড় নেই আস্তে আস্তে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন তিনি। অনেকে আবার পার্সোনাল চেম্বার তুলনামূলক ভালো লেখার চেষ্টাও করেন। কারণ সেখানে চাপ কম থাকে এবং দ্রুতগতিতে লেখার জন্য অনেক সময় ডাক্তারদের হাতে লেখা দুর্বোধ্য হয়।
এই ঘটনা বিশ্বের প্রায় সমস্ত ডাক্তারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে প্রেসক্রিপশন সুন্দর হওয়ার দরকার নেই, যাতে বোঝা যায় এমন ভাবে লিখলেই হবে। প্রতিবছর প্রায় সাত হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় ডাক্তারদের দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশনের কারণে। ডাক্তারদের শত ব্যস্ততার মাঝে যেন প্রেসক্রিপশন লেখা বোঝা যায়, এটাই আমাদের কাম্য। দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন যেন না হয় মৃত্যুর কারণ।
No comments:
Post a Comment