মাটি রক্ষার বার্তা! ভুট্টা দিয়েই হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা, বিশেষ উদ্যোগ শিল্পীর
নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ২৪ সেপ্টেম্বর: মাটি নয়, ভুট্টা দিয়েই তৈরি হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা। মাটি রক্ষার বার্তা দিতে অভিনব এই প্রতিমা তৈরি করছেন মালদার অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড কর্মী বিষ্ণু চন্দ্র সাহা। ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে পাশ্চাত্য শিল্পের মেলবন্ধনে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ। ভুট্টার দানা, খোসা, মঞ্জুরী ব্যবহার করেই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গার রূপ। ভারতীয় বৃন্দাবনী নকশার সঙ্গে পাশ্চাত্যের ট্যাটো শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমার মধ্যে।
কোনও রকম মাটির ব্যবহার নেই প্রতিমা তৈরিতে। খড়, ধানের তুষ, গমের ভুষি- এই তিন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার কাঠামো। তার ওপরে মাটির বদলে ভুট্টার খোসার প্রলেপ। আঠার সাহায্যে কাঠামোর ওপর ভুট্টার খোসা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমা। প্রতিমার সাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুট্টার দানা ও ভুট্টার মঞ্জুরী। মঞ্জুরি পাকিয়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করা হচ্ছে। এই মঞ্জুরীর সাহায্যেই তৈরি করা হয়েছে ট্যাটো। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গোধনা। এই গোধনা পাশ্চাত্যের ট্যাটো হিসেবেই পরিচিত। দুর্গা প্রতিমার সাজের মধ্যে এই বার্তাই তুলে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী।
সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকেই এমন প্রতিমা তৈরীর পরিকল্পনা শিল্পী বিষ্ণু চন্দ্র সাহার। বিগত কয়েক বছর ধরেই তিনি মাটি ছাড়া বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে এসেছেন। এই বছরও অভিনব পরিকল্পনা, গত ছয় মাস ধরে তিনি এই প্রতিমা তৈরি করছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ খানা ভুট্টা প্রয়োজন হয়েছে প্রতিমা তৈরিতে। মোট ৩০ কেজি ভুট্টা তিনি কিনেছিলেন। এছাড়াও ভুট্টার গাছঔ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিমা তৈরিতে।
ভুট্টা দিয়ে প্রতিমা তৈরীর চিন্তাভাবনার কারণ? তিনি জানান, ভুট্টা পচনশীল। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভুট্টা ও অন্যান্য সামগ্রী জলে পচে মাছের খাবার হবে। এই প্রতিমা জল দূষণ করবে না। একদিকে যেমন তিনি মাটি রক্ষার বার্তা দিচ্ছেন, পাশাপাশি পরিবেশের দূষণ রোধ করারও বার্তা তিনি দিচ্ছেন এই শিল্পের মধ্যে দিয়ে।
ক্রমশ ভূমিক্ষয়, ভাঙন এই সমস্ত কারণে প্রতিমা তৈরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে মাটি মিলছে না। বর্তমানে প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে মৃৎশিল্পীরা হিমশিম খাচ্ছেন মাটির যোগান দিতে। আগামী প্রজন্মের শিল্পীরা মাটি ছাড়াও যেন প্রতিমা তৈরি করতে পারেন এবং এই শিল্পকে ধরে রাখতে পারেন সেই বার্তা দিতেই বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি মাটি ছাড়াই প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন।
প্রতি বছরের মতো এই বছরও তার তৈরি এই প্রতিমা মালদা শহরের ২ নম্বর গভর্মেন্ট কলোনি বাঘাযতীন ক্লাবে দেখতে পাওয়া যাবে। প্রতিমা তৈরির খরচ ক্লাব কর্তৃপক্ষ কিছু পরিমাণে দিয়েছে। তবে, শিল্পী বিষ্ণু চন্দ্র সাহা খরচের চিন্তা করেন না। বাবা একজন নামকরা মৃৎশিল্পী ছিলেন। সেখান থেকেই হাতে খড়ি তাঁর। কর্মজীবন থেকে তিনিও এখন অবসর নিয়েছেন। তাই নিত্য নতুন চিন্তাভাবনার শিল্পকলা সৃষ্টি করেই মনের তৃপ্তি পান তিনি। দর্শকদের বিনোদনের পাশাপাশি সমাজকে বিভিন্ন বার্তা দিতেই এইভাবে প্রতিমা তৈরি করতে চান আগামীতেও।
No comments:
Post a Comment