৩০০ বছরের ঐতিহ্য বুকে বালিসাই ভূঁইয়াগড় জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো
পূর্ব মেদিনীপুর: আর মাত্র দিন কয়েকের অপেক্ষা, এর পরেই শুরু দুর্গা পূজা। পুজো ঘিরে চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি। শুধু বারোয়ারি নয়, জমিদার তথা বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতেও চূড়ান্ত ব্যস্ততা। এমনই ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের সমুদ্র উপকূলবর্তী বালিসাই ভূঁইয়াগড়ের দুর্গা পুজোতেও। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই পুজো৷ কামান দেগে শুরু হয় পুজো। পালকি করে আসেন মা। পরাধীনতা ও স্বাধীনতা- দুইয়ের সূর্যই দেখেছে এই পুজো। এই দুর্গা পুজোর বিশেষ কয়েকটি রীতি-নিয়ম রয়েছে।
কামান দেগে পুজোর শুভ সূচনা হয়। পালকি চড়ে আসেন মা। বালিসাই ভূঁইয়া গড় জমিদার বাড়ির ৩০০ বছরের পুজো ঐতিহ্যের রূপাঞ্জলিতে আজও সুরভিত। বাংলা, ওড়িশা অনেকটা অংশ মিলিয়েই ছিল বালিসাই ভুঁইয়া গড়ের জমিদারির এলাকা। আধুনিকতার যুগেও পুজোর রীতি-নিয়ম আজও অটুট। সাবেকিয়ানার এক চলার প্রতিমা হয় প্রতি বছর।
বালিসাই ভূঁইয়া গড়ের সামনে রয়েছে দেবীপুকুর। মা ওখান থেকেই আসেন প্রতিবছর পালকি চড়ে। মাকে বিভিন্ন উপাচারের সাথে রীতি-আচার মেনে সজ্জিত করা হয়।ঠাকুরের কাঠামো গঠনের কাজও নির্দিষ্ট সময়-রীতি মেনে শুরু করা হয়। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানের সোজা গেটের বাইরে রয়েছে একটি বেল গাছ। মা সেখানেও পুজিতা হন।
দুর্গা পুজোর সময় ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে সাধারণ জনগণের জন্য জমিদার বাড়িতে প্রবেশ থাকে অবাধ। বালিসাই ভুঁইয়া গড়ের জমিদার বাড়িতে রয়েছি অনেক পুরনো দিনের ঐতিহ্য। ঠাকুরদালান থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ির দেওয়ালে কান পাতলে এখনও যেন শোনা যায় সেই পুরনো দিনের সুর, পুরনো দিনের ইতিহাস। জমিদার বাড়িতে আগে পুজোর সময় পালা গান হতো, যাত্রা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জমিদার বাড়ির অনুষ্ঠান দেখতে আসতেন।
জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্য শিবাশীষ দাস মহাপাত্র জানান, পুজোয় অনেক আগে বলি প্রথা ছিল, বর্তমানে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে। পুজোর প্রতিদিন হোম-যজ্ঞ হয় বালিসাই ভুঁইয়াগড়ে।
বদলেছে সময়, আধুনিকতার রুপাঞ্জলিতে জমিদার বাড়ি সেজে উঠছে এখন নবরূপে। বর্তমানে হেরিটেজের জন্য আবেদন না করে জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা নিজেরাই সারাই করছেন জমিদার বাড়ির ভাঙাচোরা অংশ থেকে জমিদার বাড়ির মন্দির। কয়েকদিন পরেই মায়ের আগমণ। সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন বাড়ির সদস্যরা। জমজমাট হয়ে উঠবে জমিদার বাড়ি। পরিবারের সকলে মিলে হৈ হৈ করে কেটে যাবে দিনগুলো।
No comments:
Post a Comment