না রাশিয়া ক্ষুব্ধ, না আমেরিকা! জি-২০ তে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মন জিতল ভারতের কূটনীতি - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 10 September 2023

না রাশিয়া ক্ষুব্ধ, না আমেরিকা! জি-২০ তে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মন জিতল ভারতের কূটনীতি


না রাশিয়া ক্ষুব্ধ, না আমেরিকা! জি-২০ তে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মন জিতল ভারতের কূটনীতি 



প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ১০ সেপ্টেম্বর: দিল্লীতে চলছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। ২১ থেকে ২১ সদস্যে পৌঁছে যাওয়া এই সংগঠনে ঐক্য প্রদর্শন করা ছিল এবার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জের কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। উক্রেনপন্থী পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কড়া সমালোচনা করা, কিন্তু রাশিয়া ও চীন এতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এই ইস্যুতে জি-২০ দেশগুলির মধ্যে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় ভারত সফল হয়েছে। কীভাবে এই ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হল, আসুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা থাকতে হবে। রাশিয়া বলেছে যে, তারা যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি নয়। ভারত একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে বলেছে যে, জি-২০ হল বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার একটি ফোরাম, যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, শান্তির মাধ্যমেই সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করা যেতে পারে।


ব্রিটেন যুক্তি দিয়েছিল যে, যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শস্য সরবরাহ চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে, যার কারণে সারা বিশ্বের ১০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।


ব্রিটেনের বক্তব্যে চীন যুক্তি দিয়েছিল যে, যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েনি বরং আমেরিকার রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার জন্য রাশিয়া নয়, আমেরিকা দায়ী।


এই যুদ্ধে রাশিয়া শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করছে, কিন্তু এই মহাযুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলায় ভারতকে কূটনীতির অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে। একটি যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা ছিল। কথাগুলো এমন হওয়া উচিৎ, যাতে আমেরিকা ও ইউক্রেনের অন্যান্য সমর্থক দেশগুলোও একমত হয় এবং সারমর্মটা এমন হওয়া উচিৎ, যাতে রাশিয়া ও তার সহযোগী দেশগুলোও একমত হয়। অর্থাৎ, বিষয়গুলি এমনভাবে বলা উচিৎ, যাতে রাশিয়ার সাথে ভারতের জোটনিরপেক্ষতা এবং বন্ধুত্ব উভয়ই অটুট থাকে।


জি-২০-র সমস্ত সদস্য দেশগুলির শেরপারা যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত করার জন্য বৈঠক করেছেন। এই বৈঠক ১৫০ ঘন্টা স্থায়ী হয়। বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। জি-৭ এবং রাশিয়া-চীনের মধ্যে মতভেদ দূর করা হয়। এই বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া সমস্যা যৌথ বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যৌথ বিবৃতিতে সব দেশই একমত। এটি সেই যৌথ বিবৃতির নথি, যার ভিত্তিতে ভারত সমস্ত সদস্য দেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছে।


 এটিকে 4P সূত্রের অধীনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে...

প্রথম P মানে PLANET অর্থাৎ গ্রহ পৃথিবী।

দ্বিতীয় P এর অর্থ PEOPLE অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষ।

তৃতীয় P এর অর্থ PEACE মানে শান্তি।

চতুর্থ P এর অর্থ PROSPERITY মানে সমৃদ্ধি।


ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যৌথ ঘোষণার প্রথম দফায় বলা হয়েছিল, যুদ্ধ ও বিরোধ বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতি অনুযায়ী সব দেশের আচরণ করতে হবে বলেও লেখা ছিল। কোনও দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা উচিৎ নয়।


জি-২০ রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম নয়। যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনে শস্য ও সার সরবরাহ কৃষ্ণ সাগর থেকে শুরু হওয়া উচিৎ। যুদ্ধের সময় খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা প্রদানকারী অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে এবং কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে। এটা যুদ্ধের যুগ নয়, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার’ এবং ‘এক ভবিষ্যৎ’-এর যুগ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad