অলৌকিক কামড়ে ওঝার কাছে তিনশোর বেশি, মৃত ২
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ৩০ সেপ্টেম্বর: অলৌকিক কামড়ে আহত হয়ে ওঝার কাছে ছুটছে তিনশোর বেশি মানুষ। সচেতনতা ফেরাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন প্রশাসন ও বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ও মাটিয়া থানার গোবিলা সহ আশপাশের এলাকায়। সাপের কামড়ে শিশু সহ দুজনের মৃত্যুর পর এই ঘটনা ঘটেছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে দেগঙ্গা ও মাটিয়া থানার গোবিলা এলাকায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় এক শিশু সহ দুই ব্যক্তির। পরে সাপের কামড়ে আহত হয় আরও পাঁচ জন। শিশু সহ দুই আহতকে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করে পরিবারের লোকেরা। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায় দুজন। পরবর্তীতে গোবিলা সহ আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৩০০ মানুষ মনে করছেন তারা সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সাপকে কেউ দেখতে পাননি। কামড় খেয়ে আহতরা ছুটছেন ওঝার কাছে।
সাপের কামড়ে হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর আজও ভরসা করেন না অধিকাংশ মানুষ। খবরটি চাউর হতে ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা গ্রামে এসে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ওঝার কাছে না যেতে বোঝান গ্রামবাসীদের।
বাসিন্দাদের দাবী, গত কয়েকদিন ধরে গোবিলা সহ আশেপাশের চার গ্ৰামের তিনশোর বেশি মানুষকে রাতের অন্ধকারে ও দিনে কাজের ফাঁকে কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে ক্ষত স্থানে জালা অনুভব করেন। তবে কে কামড়াচ্ছে, তা দেখতে পাননি। ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি চাউর হতেই দেগঙ্গা ও বসিরহাট এক নম্বর ব্লকের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য আধিকারিকরা গুজবে আক্রান্ত গ্রামগুলির বাসিন্দাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন ও সচেতন করতে বোঝান।
বসিরহাট এক ব্লকের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী বলেন, "কয়েক জনকে সাপে কামড়ালেও সবাইকে কামড়েছে এমন নয়। আমি চার গ্রামের আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। অন্যান্য পোকা মাকড় কামড়ালেও সাপে কামড়েছে এমন ধারণা করছেন বেশির ভাগ মানুষ। এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যদের নিয়ে প্রচার ও সচেতনতা শিবির সহ একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে।"
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, "পাঁচ সাত জনের হয়ত সাপে কামড়েছে। বাকিদের কিছু কামড়ালেই তারা ভয়ে সাপে কাটার আতঙ্কে এখানে-ওখানে যাচ্ছে। ওঝা কোনও ভাবেই সাপের বিষ সরাতে পারেন না। দেগঙ্গা ও মাটিয়া এলাকার ওঝাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিৎ। এলাকায় গুজব সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি আমরাও প্রচার করছি।"
স্থানীয় শিক্ষক ডক্টর এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, "রাতে ঘুমানোর পর হাতে কিছু একটা কামড়েছে বুঝে উঠে দেখি রক্ত বের হচ্ছে। ওই রাতে ক্ষত স্থানে ফিটকিরি দেই, তেঁতুল খাই। সকালে হাসপাতালে যাই। এখন সুস্থ। এলাকার বহু মানুষ ওঝার ওপরে বিশ্বাস বেশি করছে। আতঙ্ক ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এর থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনতে হবে।"
সাপের কামড়ে মৃত শিশুর বাবা মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, "কয়েকদিন আগে আমার এক শিশুকে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড়ায়। প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যাই। পরে বারাসত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয়।"
No comments:
Post a Comment