দত্তপুকুরে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! মারধরে আহত ৩ - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, 7 September 2023

দত্তপুকুরে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! মারধরে আহত ৩


দত্তপুকুরে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! মারধরে আহত ৩



নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৭ সেপ্টেম্বর: তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যর স্বামী ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার অন্তর্গত কাশিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকৃষ্ণ পল্লী এলাকায় ১০২ /১৮৭ পার্টে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ জন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দত্তপুকুর থানার পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা বিজেপির। 


অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই ঘরছাড়া ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা রীনা দাসের স্বামী মন্টু দাস। কারণ বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা অসীমা দাসের স্বামী রবিন দাসের অত্যাচার। গতকাল (বুধবার) রাতে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে মন্টু দাস বাড়িতে আসছিলেন। খবর পেয়ে রবীন দাস ও তাঁর অনুগামীরা চড়াও হয় মন্টু দাসের ওপর এবং তাকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং ভাঙচুর করা হয় তার বাড়িতেও। পরিবারের সদস্যরা ঠেকাতে গেলে এক মহিলা সহ তার দাদাকেও ব্যাপক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। 


ইতিমধ্যেই গুরুতর আহত অবস্থায় বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মন্টু দাস সহ তিন জন। গোটা ঘটনায় দত্তপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় মন্টু দাসের পরিবারের তরফে। অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। 


এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা রীনা দাস বলেন, "আমি এবার টিকিট পাইনি তাতে কোনও ব্যাপার না কিন্তু আমাকে তো শান্তিতে থাকতে দিতে হবে। ভোটে জেতার পর থেকে আতঙ্ক, আমার সহ অনেক বাড়ি ঘর ভাংচুর করেছে। গতকাল মেয়ের শরীর খারাপ থাকায় ওর বাবা দেখতে আসছিলেন, তখন ওরা ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে ছিল প্রতিদিনের মত। রবীন দাস তার ছেলে সহ অনেকে বাইক থেকে টেনে নামিয়ে শাবল, রড দিয়ে মেরেছে। বাইক পুড়িয়ে দিয়েছে। গলার চেন, সোনার আংটি, টাকা, মোবাইল সব নিয়ে নিয়েছে।"


তিনি বলেন, "থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এগুলো অত্যাচার এবার বন্ধ হোক এটাই চাই। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে এক প্রকার। আমি, আমার বৌমা, মেয়েও গতকাল আক্রান্ত হয়েছি স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে। জামাকাপড় পর্যন্ত ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে।' তিনি এও জানান, ওরা সবাই বিজেপি করত, তৃণমূলের কেউ না‌। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূলের হয়ে টিকিট পেয়েছে এবং তৃণমূলের অনুগামী। 


আক্রান্তর দাদা মনোরঞ্জন দাস বলেন, "এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মেয়ে অসুস্থ, খবর পেয়ে ভাই দেখতে আসছিল, তখনই ওরা মারে। ভাইকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও বেধড়ক মারধর করে রবীন দাস, তার ছেলে সহ অন্যান্যরা। ওরা তৃণমূল করে আমরাও তৃণমূল করি। নির্বাচনের আগে দলীয় পতাকা লাগানো নিয়ে ওদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল, সেই থেকেই ভাইকে পাড়ায় ঢুকতে দেয় না, বাড়ি আসতে দেয় না। কাল বাড়ি আসছে খবর পেয়ে ওরা ভাইকে বেধড়ক মারধর করে।"


এদিকে পঞ্চায়েত প্রধান তথা কাশিমপুর অঞ্চল সভাপতি মেঘনাদ দাসের দাবী, এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয় এটা ব্যক্তিগত কারণে এই ঝামেলা। তিনি বলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই। যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। ঘটনা ঘটার পর কাল সঙ্গে সঙ্গে আমি দত্তপুকুর থানায় যোগাযোগ করি এবং বলেছি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে এসেছে চার জনকে গ্রেফতার করেছে। আইন আইনের পথেই চলবে।"


তিনি আরও বলেন, "গোষ্ঠী কোন্দল বলব না কারণ এই মন্টু দাসই একবার রবীন দাসকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। সেটা একটা রাজনৈতিক ব্যাপার ছিল এবং তখন আমরা বসে এটা মিটিয়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ কাল কেন এই ঘটনা ঘটাল, সেটা রবীন দাসই বলতে পারবে।"


অপরদিকে গোটা বিষয়টি নিয়ে শাসক দলকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা জয়দেব পাল বলেন, "মন্টু দাসকে রবীন দাসের দলবল ব্যাপক মারধর করেছে। এই মন্টু দাস প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী। গত বিধানসভা ভোটের পর ভোট পরবর্তী হিংসায় আমাদের কার্যকর্তাদের ব্যাপক মারধর করেছে। অনেক সাধারনষণ মানুষের দোকানপাট, কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে‌। আমাদের বিজেপির একজন কার্যকর্তার ৫০ লক্ষ টাকার জমি আজকের দিনে পর্যন্ত দখল করে রেখেছে। এখন বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্যা রবীন দাসের স্ত্রী। মূলত তোলাবাজি, ঐ এলাকার রাশ কার হাতে থাকবে, এই বিষয় নিয়ে ওদের মারামারি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সারা পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad