পুজোর মুখেই দুর্যোগের কবলে বাংলা! নবান্নে জরুরি বৈঠক, ছুটি বাতিলের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
নিজস্ব সংবাদদাতা, হাওড়া, ০৪ অক্টোবর: বুধবার সকালে মেঘফাটা বৃষ্টির জেরে বাঁধ ভেঙে তিস্তা ভয়াল রূপ ধারণ করে। এর জেরে পুজোর আগেই বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হল রাজ্যের একাংশ। পাশপাশি ডিভিসি, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর থেকে জল ছাড়াতে নতুন করে বিপর্যয় বাড়ছে হুগলি-হাওড়ার একাংশে। ডিভিসি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জল না ছাড়লে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত ছুটি বাতিল করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও রাজ্যে খোলা হল ২৪ ঘন্টার হেল্পলাইন।
মঙ্গলবার রাত থেকে এক নাগাড়ে ভারী বৃষ্টি এবং ডিভিসি জল ছাড়ায় নতুন করে বানভাসি রাজ্যের একাধিক এলাকা। সিকিমে বাঁধ ভেঙে পড়ায় ভয়াল রূপ ধারণ করেছে তিস্তাও। তার জেরে পুজোর আগে বিপর্যয় নেমে এসেছে বাংলায়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে, নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। সরকারের তরফে আপদকালীন হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। বিপদ এড়াতে এবং আগামী কয়েক দিন সতর্ক থাকতে বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্য দফতরের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের ২৪ ঘণ্টার দু'টি হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে, ১৮০০-২১২-১৬৫৫ এবং ৯০৫১৮৮৮১৭১। নবান্নের আপদকালীন নম্বর ০৩৩-২২১৪ ২৫২৬।
রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। পায়ে চোট লাগায় বৈঠকে সশরীরে হাজির হতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে সারাক্ষণ ফোনে ছিলেন তিনি। ফোনেই এদিন সতর্কবার্তা দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পর বিপর্যয় নেমে এসেছে। জাতীয় সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং। জলস্তর নামলে তবেই তিস্তার বাঁধ মেরামতের কাজে হাত দেওয়া যাবে। আপাতত মানুষজনকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কথা হয়েছে অনীত থাপার সঙ্গে। সেনার সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাদের সবরকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা।"
এদিন মমতা জানিয়েছেন, একদিকে ডিভিসি জল ছেড়েছে, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর থেকেও জল ছাড়া হচ্ছে, বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১ লক্ষ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, তখ রাজ্য সরকারের তরফে কমাতে বলা হয়েছে। এই জল এসে পৌঁছতে সময় লাগে তিন দিন। সেই জলই ধীরে ধীরে উদয়নারায়ণপুর, খানাকুল, ঘাটালে ঢুকতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকারের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি এবং মন্ত্রীরা বিপর্যস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনে যাবেন এবং উদয়ন গুহ, রবি ঘোষরা ইতিমধ্যেই বেরিয়ে পড়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পায়ে চোট লাগায় এই মুহূর্তে ঘরবন্দি মুখ্যমন্ত্রী। তবে ২৪ ঘন্টা তিনি সবকিছুর উপর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন। নীচু জায়গা থেকে মানুষ জনকে রাজ্যের ত্রাণ শিবিরে চলে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। নদী এবং সমুদ্রে যেতে বারণ করেছেন সকলকে। বিদ্যুৎ দফতর এবং স্বাস্থ্য দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। আপাতত তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক করেছেন। জমা জলে বিদ্যুতের তার পড়ে থাকলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
এদিন মমতা বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ আসলে নৌকার মতো, নদীবেষ্টিত রাজ্য। বিহার, ঝাড়খণ্ড, সিকিম জল ছাড়লে আমরা ডুবে যাই। এখনও পর্যন্ত মালদা ঠিক আছে। বৃষ্টি কমে গেলে ভালো, নইলে আরও বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের তরফে কোথাও, কোনও গাফিলতি থাকা চলবে না। পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ত্রাণসামগ্রী থেকে সব বন্দোবস্ত করে রেখেছে সরকার। খোলা হয়েছে ত্রাণশিবির। পুজোর আগে কষ্ট হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা দু'পয়সা বাড়তি রোজগারের আশায় থাকেন। তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করার সাহস আমাদের নেই। এই সনময়ে সকলকে একজোট হয়ে, ভালবাসা দিয়ে পরস্পরকে রক্ষা করতে হবে।"
সিকিমে মেঘভাঙা বৃষ্টির পর বাঁধ ভেঙে বিপর্যয় নেমে আসে, ২০ জনের বেশি সেনাকর্মী জলে ভেসে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বাংলায় এখনও পর্যন্ত তিনটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সেগুলিকে শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান মমতা। তাঁর আশঙ্কা, জলের তোড়ে এদিক-ওদিক ভেসে গিয়ে থাকতে পারে দেহগুলি। বাংলার তরফে নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির দিকে। সিকিমকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত তাঁর সরকার, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
No comments:
Post a Comment