১৩৮ বছরের সাবেকি রীতিতে আজও দুর্গা পুজো হয় মনোহলি জমিদার বাড়িতে - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 3 October 2023

১৩৮ বছরের সাবেকি রীতিতে আজও দুর্গা পুজো হয় মনোহলি জমিদার বাড়িতে


 ১৩৮ বছরের সাবেকি রীতিতে আজও দুর্গা পুজো হয় মনোহলি জমিদার বাড়িতে 



দক্ষিণ দিনাজপুর: জমিদার নেই আর জমিদারিও নেই। কিন্তু সেই আমল থেকে শুরু হওয়া দুর্গা পুজোগুলি আজও ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষদের জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোর প্রতি আকর্ষণের ঘাটতি হয়নি আজও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের "মনোহলি" জমিদার বাড়ির পুজো আজ থেকে ১৩৮বছর আগে শুরু হয়েছিল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আগের সেই অবস্থা আর নেই বললেই চলে। অবস্থা নেই বলে কি এতদিনের পুজো বন্ধ হয়ে যাবে? এরপর মনোহলি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে চাঁদা তুলে বারোয়ারি মতে পুজো করে আসছে বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবৎ। 


বারোয়ারি মতে পুজো হলেও আজও সেই দুর্গা পুজো জমিদার বাড়ির পুজো বলেই খ্যাত। পরিবারে সদস্যরা বছরের অন্যান্য সময় বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও পুজোর এই পাঁচটি দিন তারা একত্রিত হয়ে থাকেন। এর ফলে এই পাঁচটি দিন পরিবারের সদস্যরা মিলন উৎসবে মেতে ওঠেন।

      

উল্লেখ্য, বর্ধমানের কাটোয়া অঞ্চলের সিংগী গ্রাম থেকে বর্ধমান মহারাজার নির্দেশে দিনাজপুরের মহারাজার এলাকায় এরিয়া ডেভেলপমেন্টের কাজে এসেছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। চাঁদ বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পরবর্তী সময়ে তপন ব্লকের মনোহলি অঞ্চলে শুরু হয় এলাকা উন্নয়নের কাজ। প্রথম অবস্থায় ডাকাতদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই মনোহলি এলাকায় ধীরে ধীরে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রভাব বাড়তে শুরু করে এবং বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে প্রভূত টাকার মালিক হয়ে ওঠেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ১৮৩০ সালে জমিদারি শুরু হয় মনোহলি গ্রামে। 


এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়েছে, কালের নিয়মে ধ্বংস হয়ে গেছে জমিদারির অনেক কিছুই। পুরনো ইতিহাসকে সাক্ষী করে দাঁড়িয়ে রয়েছে মনোহলি জমিদার পরিবারের রাজবাড়ি, সেই জাঁকজমক আর নেই। চন্ডীমণ্ডপ থাকলেও সেখানে আর পূজা-আরাধনা হয় না বললেই চলে।


১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজার প্রচলন করেছিলেন তারাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়, যা অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। পুজোর জন্য নির্মাণ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে পুজোর জন্য রীতি-নিষ্ঠার ঘাটতি হয়নি। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক পুজো ২০১২ সাল থেকে বারোয়ারি পুজোর রূপ নিয়েছে। জমিদার বাড়ির পুরনো ভগ্ন প্রায় মন্দিরার পুজো হয় না। জমিদারের জমিতে এখন তৈরি হয়েছে স্থায়ী দুর্গা মন্দির। পুজোর পাঁচ দিন মহাভোজ হয়, মেলাও বসে। দেবীর প্রতিমা হয় সাবেকি। তান্ত্রিক মতে দেবীর পূজা হলেও দীর্ঘদিন থেকে বলগ প্রথা উঠে গিয়েছে। দেবীকে পূজোর দিনগুলোতে পঞ্চব্যঞ্জনে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। 

     

বর্তমান প্রজন্মের জমিদার বংশের অমর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, দুর্গা‌ পূজার এই পাঁচ দিন জমিদার পরিবারে নানান অনুষ্ঠান হতো, বসতো নহবতখানা, এখন গ্রামবাসীদের পক্ষে সেটা মেনে চলা সম্ভব নয়। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পূজায় প্রতিদিনই বলি প্রথার আয়োজন থাকতো। এছাড়াও বিশেষ পূজা-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লোকজনকেও খাওয়ানো হতো পূজার কদিন। এখন আর সেই আর্থিক সামর্থ্য জমিদার পরিবারের নেই। দেখভালের অভাবে জমিদার বাড়ি ভেঙে পড়েছে। হয়ে উঠেছে ভুতুড়ে বাড়ির মত। শুধুমাত্র একজন পরিবারের সদস্য অমর বন্দ্যোপাধ্যায় মনোহলিতেই থাকেন এবং একাই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন জমিদার পরিবারের শেষ স্মৃতিটুকু।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad