পুজোর পর মায়ের মুখ দেখেন না পরিবারের সদস্যরা! ৬০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা পুজোর এটাই রীতি
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ১০ অক্টোবর: সামনেই দুর্গা পুজো। এই উপলক্ষে সেজে উঠছে বারোয়ারির পাশাপাশি বনেদি বাড়িগুলোও। এমনই একটি পুজো হল বাঁকুড়া জেলার ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গা পূজা। এই পুজোর ইতিহাস জানলে অবাক হতেই হয়। এই রাজবাড়ির দুর্গা পূজা একদম নিখুঁত ভাবে প্রথা মেনে করা হলেও রাজ পরিবারের সদস্যরা পুজোর পর আর মায়ের মুখ দেখেন না। যান না মায়ের মন্দিরেও। সন্ধ্যে নামতেই চুপি চুপি হয়ে যায় বিসর্জন। কিন্তু কেন?
ছাতনা রাজবাড়ির বর্তমান রাজা প্রদীপ সিংহ দেও জানান, সামন্তভুম ছাতনার সঙ্গে কুলদেবী মা বাসুলির গভীর সম্পর্ক। বর্তমান রাজার মুখেই জানা গেল ঠিক কীভাবে সামন্তভুম ছাতনা এবং মল্লভূম বিষ্ণুপুরের মধ্যে এক বিবাদের জেরে শুরু হয়েছিল ৬০০ বছরের প্রাচীন ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গা পুজো। প্রদীপ সিংহ দেও জানান, ছাতনার ভূমিপুত্র চারণকবি বড়ু চন্ডীদাসকে কেন্দ্র করে চরম বিবাদ সৃষ্টি হয় বিষ্ণুপুর এবং সামন্তভুম ছাতনার মধ্যে। তারপর এই দৈব বিবাদ মেটাতে সন্ধি হয়। কথিত আছে সন্ধিতে উল্লেখ করা ছিল সামন্তভূমের কুলদেবী মা বাসুলি পূজিতা হবেন বিষ্ণুপুরে এবং মল্লভূমের মা মৃন্ময়ীর আরাধনা হবে সামন্তভুম ছাতনায়। তখন থেকেই শুরু ছাতনা রাজবাড়ির বিষ্ণুপুরী আদলে দুর্গোৎসব।
নিষ্ঠা ভরে পূজিত হন মা মৃন্ময়ী। নিজের হাতে পুজো করেন বর্তমান রাজা প্রদীপ সিংহ দেও। পূজার পর পুনরায় বাসুলি মন্দিরে গিয়ে পূজা সেরে নেন মানসিক শান্তির জন্য। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ছাতনার রাজবাড়িতে দুর্গোৎসব শেষ হলে মন্দিরে এসে মায়ের মুখ দেখেন না রাজ পরিবারের সদস্যরা। বিসর্জনের দিন সময় হলে সূর্যাস্তের পর ছাতনার এক বিশেষ পাড়া থেকে জমা হন একাধিক মানুষ। বংশপরম্পরা অনুযায়ী বিগত ৬০০ বছর ধরে এনারাই করে আসছেন বিসর্জনের কাজ। বিসর্জনের সময় ঘরের ভেতরে থাকেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। তাদের অজান্তেই হয়ে যায় মায়ের বিসর্জন।
একটি ছোট্ট প্রতিবেদনে ছাতনা রাজবাড়ী, কুলদেবী মা বাসুলি এবং রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব নয়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি। প্রতি বছর ছাতনা রাজবাড়িতে আগ্রহীরা জমা হন দূর দূরান্ত থেকে পুজোর ইতিহাস জানতে।
No comments:
Post a Comment