নারীশক্তির আরাধনায় নারীরা
উত্তর ২৪ পরগনা: মহিষাসুরকে বধ করে দেবতাগণকে রক্ষা করেছিলেন দেবী দুর্গা। সেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠবেন সকলে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। আর এবার দত্তপুকুর জয়পুর বঙ্গানন্দ পল্লী এলাকায় ৪০ জনেরও বেশি নারী মিলে নারীশক্তির পুজোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই বছর তাদের প্রথম পুজো। দিন কয়েক আগেই ঘটা করে খুঁটি পুজো হয়ে যায়। আর এই খুঁটি পুজো ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মত।
নারী শক্তির সদস্য সোমা দাস বলেন, 'মা দুর্গার থেকেই আমরা সমস্ত শক্তি পাই। আমাদের কাছে মা দুর্গার প্রথম নারী। পুজোয় আমরা সবসময় বাইরে গিয়ে আনন্দ করি তাই চাইছিলাম এবার নিজেরা কিছু করতে। তাই চলতি বছর আমরা এই পুজো চালু করছি। এখানে ৪০ জনের ওপরে নারী সদস্য রয়েছে।' তিনি আরও বলেন, এটা সবে শুরু, আমরা থামি না।'
নারী শক্তির অপর সদস্য চৈতালি সাহা বলেন, আমরা সবাই মিলে ঠাকুর বায়না করতে যাব। এই পুজো বাঙালির একটা আবেগ আর আমাদের মহিলাদের আবেগ একটু বেশি পরিমাণে কাজের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে চাই।' নারীশক্তির পক্ষ থেকে সকল গ্ৰামবাসীকে পুজোয় আমন্ত্রণও জানান তিনি।
বিথিকা মিস্ত্রীর কথায়, 'আমাদের টাকা অল্প কিন্তু আমরা আনন্দ করতে চাই অনেক।' তাঁর সংযোজন, 'সবে তো শুরু। এরপর নানান রঙে সবাই সাজবেন, এক এক দিন থাকবে এক এক রকমের সাজ। মা দুর্গা কত সুন্দর করে সেজে এসেছেন, আমরা প্রতিটা নারীও সেভাবেই সেজে উঠব।'
মায়ের আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন এলাকার নারীরা। তাদের পাশে দাঁড়ালেন আমডাঙার বিধায়ক রফিকুল রহমান। খুঁটি পুজো উপলক্ষে এলাকার নারী শক্তিদের সাথে ঢাকের তালে কোমর দোলালেন বিধায়ক। পাশাপাশি তাদের সমস্ত আয়োজনে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বিধায়ক বলেন, "বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ, এটাই বাংলার সংস্কৃতি। দীর্ঘ ৩৪ বছর একটা সরকার ছিল যারা ঈশ্বর-আল্লায় বিশ্বাস করত না। ফলে দিনে দিনে পুজোর প্রয়োজনীয়তা কম ছিল, নিস্প্রভ হয়ে যাচ্ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর বাংলা আবার উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে এবং এই দুর্গা পুজো বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে। এটা শুধুমাত্র একটা সম্প্রদায় না বাংলার অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঠিক একই ভাবে ঈদও বাংলার অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই সব দান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।"
তিনি আরও বলেন, "নারী পুজো আজ থেকে না পৃথিবীর সভ্যতার শুরু থেকে। হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়োর যে নিদর্শন পাওয়া গেছে, সেখানেও নারী শক্তির পুজো হতো। এটা ভারতবর্ষের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ধারাবাহিকতা।" বিধায়ক জানান, নারীশক্তির এই পুজোয় তাদের সাথে আছেন এবং কিছু জামাকাপড়ও দেবেন বিতরণের জন্য।
বিধায়ক বলেন, 'শারদ উৎসব শুরু হল, শেষ হবে কার্ত্তিক পুজো দিয়ে। এরপরের আমরা আমাদের রাজনৈতিক উৎসব '২০২৪-এ বিজেপি হটাও'-এই উৎসবে মেতে উঠব।'
আমডাঙার বিধায়কের পাশাপাশি নারীশক্তির খুঁটি পুজোয় উপস্থিত ছিলেন কাশিমপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সদস্য অমল কুমার বিষ্ণু। তিনি পুজোর মঙ্গল কামনা করার পাশাপাশি বলেন, 'শারদ উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব। এখানে এই প্রথম বছর এলাকার মায়েরা-বোনেরা-মেয়েরা নারীশক্তির নাম দিয়ে যে পুজো করছেন, তাদের সফলতা কামনা করি।'
এছাড়াও নারীশক্তির এই পুজোয় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দত্তপুকুর ২ নং গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান থেকে উপপ্রধান সকলেই।
নারী মানেই সৃষ্টি, নারী মানেই মা। আর এই প্রথম বছর সেই দশভূজা নারীরই আরাধনা করতে যাচ্ছেন দত্তপুকুর জয়পুর বঙ্গানন্দ পল্লী এলাকার নারীশক্তি। তাদের এই পুজো ঘিরে উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো।
No comments:
Post a Comment