জমিদারি না থাকলেও জমজমাট২৫০ বছরের পাল বাড়ির পুজো - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 18 October 2023

জমিদারি না থাকলেও জমজমাট২৫০ বছরের পাল বাড়ির পুজো


জমিদারি না থাকলেও জমজমাট২৫০ বছরের পাল বাড়ির পুজো



কলকাতা: আজ থেকে আনুমানিক ২৫০ বছর আগে বর্ধমান রাজাদের থেকে ইন্দাস অঞ্চলের ছটি মৌজা কিনে চন্দ্রমোহন পাল শুরু করেন জমিদারি। তৎকালীন সময়ে চন্দ্রমোহন ছিলেন বিখ্যাত বস্ত্র ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে বিলেতি কাপড় নিয়ে চন্দ্রমোহন পালের নৌকো নিয়মিত ভিড়তো কলকাতার বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে। সেখান থেকে কাপড় যেত মহানগরে তাদের আড়তে। তাই নিজের সুবিধের জন্য সেইসময় গঙ্গার পাড়ে নিজের খরচে একটা ঘাট তৈরি করেন, যা এখনও চাঁদপাল ঘাট নামে পরিচিত। কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ও বর্ধমানে একাধিক বাড়িও তৈরি করেছিলেন তিনি। ইন্দাসেও জমিদারি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে দামোদর নদের পাড়ে তৈরি করেন সুবিশাল সাতমহলা অট্টালিকা। 


জানা যায়, ব্যবসা সূত্রে পাল বংশের সদস্যরা কলকাতায় থাকলেও পুজোর দিনে তারা গরীব প্রজাদের জন্য নতুন জামাকাপড় নিয়ে সংসার ঘাটে এসে নামতেন। ঐ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের প্রজারা। পুজোর চার দিন চলত যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, রামলীলা। নহবতখানায় বসত নহবতের আসর। 


বর্তমানে জমিদারির বনেদিআনা হারালেও সংসার জমিদার বাড়ির নাটমন্দির এখনও মেতে ওঠে পুজোর আনন্দে। পুজোর সময় চাঁদপালের উত্তর পুরুষরা ছুটে আসেন সংসার গ্রামের জমিদার বাড়িতে। এখন সময়ের ব্যবধানে সেই প্রাচুর্যে টান ধরেছে। জমিদারি চলে গিয়েছে বহুদিন। পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসাও আর নেই। তবে, আজও ২৫০ বছরের ঐতিহ্য ও দুর্গাপুজোর ইতিহাস নিয়ে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার সংসারে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভগ্ন প্রায় জরাজীর্ণ এক প্রাসাদ। আর এই প্রাসাদেই স্বমহিমায় আসতে চলেছেন মা, তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে। 


এই বংশের সন্তান উদয় কুমার পাল আক্ষেপের সুরে বলেন, 'অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আর আগের মতো ব্যবস্থা করে উঠতে না পারলেও কিন্তু সেই পুরনো নিয়ম অনুযায়ী মায়ের পুজো সম্পন্ন হয়। আগে যাত্রা হতো, দরিদ্র নারায়ণ সেবা করা হতো, কাপড় বিলি হতো। এখন আর সেটা করা সম্ভব হয় না।'


তাদের সোনার রথ ছিল, রুপোর রথ ছিল, হাতি ছিল, ঘোড়া ছিল, ১০৮ টা ঝাড়বাতি জ্বলতো, ১৫ দিন আগে রাঁধুনি চলে আসতো। তারা পুজোর চারদিন নিরামিষ খান। এখানে অনেক লোক আসেন পুজো দেখতে। কলকাতা থেকেও অনেক লোক আসেন। তারা প্রসাদ নেন। তাদের যথাযথ আপ্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়।


আজ থেকে ২৫০ বছর আগের পাল বাড়ির পুজোর জৌলুস কমলেও নিয়ম-নীতি-নিষ্ঠার কোনও ঘাটতি নেই।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad