জেনে নিন, কেমন হবে মানুষ ছাড়া পৃথিবী
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৩১শে অক্টোবর, কলকাতা: মানুষ ছাড়া কেমন অবস্থা হবে পৃথিবীর? মানুষের বানানো এত জিনিসেরই বা কি হবে? বড় বড় ব্রিজ, বিল্ডিং এগুলিতে কারা বসবাস ও ব্যবহার করবে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিল বিজ্ঞানীরা, যা শুনলে চমকে যাবেন আপনি।
মানুষ যেভাবে দিনের পর দিন উন্নয়নের নামে পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে, তার প্রভাব যে কি মারাত্মক হতে পারে তা প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বায়ু দূষণ, জলের পরিমাণ হ্রাস, পশুপাখি লুপ্ত হওয়া এসবই মানুষের উন্নয়ন ঘটানোর ফল। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে এরকম যদি দিনের পর দিন চলতে থাকে তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হতে আর খুব বেশি দিন বাকি নেই।
কিন্তু আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন, যদি মানুষ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে কি হবে? কেমন হবে এই মানুষ ছাড়া পৃথিবীর? মানুষের বানানো এত জিনিসেরই বা কি হবে? এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক কার্লটন একটি প্রবন্ধে বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন।
কার্লটন জানিয়েছেন, যদি এমন কোনো পৃথিবীতে যাই, যেখানে প্রায় এক বছর মানুষ থাকেনি সেখানে এক চরম শান্তি থাকবে। কারণ সেখানে মানুষের কার্যকলাপ এবং কোলাহল থাকবে না। গাড়ি, কারখানা, যন্ত্রপাতি সব বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ না থাকলে আবহাওয়ার বিপুল পরিবর্তন আসবে। আকাশ আরো পরিষ্কার ও নীল দেখাবে, কারণ দূষণ থাকবে না ও বায়ুমণ্ডল আবারও আগের মতন দূষণমুক্ত থাকবে।
তবে এই পৃথিবীতে জল ও বিদ্যুৎ থাকবে না, কারণ তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। জলের জন্য পাশের নদী বা পুকুরের আশ্রয় নিতে হবে। বিভিন্ন ঘরবাড়ি অন্ধকার এবং অপরিষ্কার থাকবে এবং সেখানে মাকড়সার জাল বাসা বাঁধবে। রাস্তার দু'পাশে এলোমেলোভাবে ঘাস ও গাছপালা দেখা দেবে। বিভিন্ন জায়গায় আগাছার সৃষ্টি হবে।
এক কথায় প্রকৃতি মানুষের তৈরি সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব করবে এবং মানুষের ইতিহাস তৈরি হতে শুরু করবে। সেইসাথে আরো একটি বিষয় দেখা যাবে সেটি হল, মানুষ না থাকলে পৃথিবীতে জীবের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। কারণ হঠাৎ করে অনেক এলাকা বনে পরিণত হতে শুরু করলে সেখানে প্রাণীরা তাদের ইচ্ছামতো জায়গা দখল করতে শুরু করবে। যার ফলে কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য শহুরে প্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে। এছাড়া অনেক নতুন প্রজাতির বিকাশও শুরু হবে। কারণ প্রাকৃতিক আবাসস্থল ও ঋতু পরিবর্তন হবে, কৃত্রিম স্থানগুলি প্রাকৃতিক জায়গায় পরিবর্তিত হবে এবং একই সময়ে জীবের মধ্যে অস্বস্তির সংগ্রামও তীব্র হবে।
আর এভাবে কিছু সময় চলতে থাকার পর অর্থাৎ প্রায় ৩০০ বছর পর বড় বড় ধাতুর তৈরি নির্মাণ যেমন, আইফেল টাওয়ার, লন্ডন ব্রিজ, হাওড়া ব্রিজ সহ বাকি সব ব্রিজ ও বড় বড় বিল্ডিং শুধুমাত্র মরচে ধরা বা কোনো রকম মেইন্টেনেন্স না হওয়ার কারণে ভেঙে পড়তে শুরু করবে।
এই নির্মাণ গুলি ধ্বংসের ফলে বিভিন্নস্থানে জন্মে থাকা জল বিভিন্নস্থানে প্রসারিত হতে পারবে। আর জল ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে পশু পাখিদেরও অনেক সুবিধা হবে। যার ফলে নতুন নতুন প্রজাতির প্রাণীরা জন্ম নিতে শুরু করবে অথবা লুপ্ত হওয়া প্রাণীরাও আবার জন্মগ্রহণ করবে।
মানুষ চলে যাওয়ার কারণে শুধুমাত্র স্থলভূমি বা স্থলভূমির প্রাণীদেরই সুবিধা হবে তা কিন্তু নয়, জলজ ও জলের প্রাণীদের জীবন যাপনেও অনেক উন্নতি আসবে। আর তার কিছু সময় পর সব শহর পরিণত হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে।
তবে কিছু মানুষের তৈরি জিনিস অবশ্য থেকে যাবে তা হলো, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য এবং প্লাস্টিকের নোংরা আবর্জনা। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রায় পঞ্চাশ লাখ বছর পর তাও আর থাকবে না অর্থাৎ এরপর যদি পৃথিবীতে কোনো রকম বুদ্ধিমান সভ্যতার সৃষ্টি হয়, তাহলে তারা হয়তো কোনদিনও জানতেই পারবে না পৃথিবীতে আমাদের মত মানুষেরও বসবাস ছিল। অর্থাৎ বুঝতে পারছেন তো মনুষ্য প্রজাতি পরিবেশের কতটা ক্ষতি করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তাই প্রত্যেকেরই একটু সচেতন হওয়া জরুরী কারণ সেই সচেতনতা আমাদেরই উপকারে আসবে।
No comments:
Post a Comment