বিকৃত মুখ-শরীরে একাধিক ক্ষত! উদ্ধার মহিলার দেহ, পাশেই ছড়িয়ে লঙ্কার গুঁড়ো-চাকু
নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ১৫ অক্টোবর: সাতসকালে হাড়হিম দৃশ্য, ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার মহিলার বিকৃত দেহ। বাংলা-বিহার সীমান্তবর্তী এলাকার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ঘটনা। অ্যাসিড ও লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে মহিলার মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেহে একাধিক চাকু দিয়ে কোপানোর দাগ। ঘটনাস্থলের চারিদিকে পড়ে রয়েছে অ্যাসিডের বোতল, জন্মনিরোধক, চাকু, লঙ্কা গুঁড়ো প্রভৃতি। প্রাথমিক অনুমান, গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।
রবিবার সকালের এই দৃশ্যে রীতিমতো কেঁপে উঠেছেন এলাকার মানুষ। মৃতের নাম পরিচয় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের নসরপুর গ্রামের রাস্তার ধারে এক চাষের জমিতে মৃতদেহটি এদিন স্থানীয়রাই প্রথম দেখতে পান। এরপর খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ঘটনার তদন্ত।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাইম বলেন, "সকালে লোকমুখে খুন হয়েছে শুনে ছুটে এসে দেখি এখানে দেহ পড়ে আছে। তবে আমাদের এলাকার না, খুন করে এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। লঙ্কার গুঁড়ো, গ্লাভস, নিরোধের প্যাকেট, অ্যাসিড বোতলের ছিপিও পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা তথা সুলতান নগরের গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, "এসে দেখি দেহ পড়ে রয়েছে। আশেপাশে পড়ে রয়েছে চাকু, জন্মনিরোধক। অ্যাসিড বোতলের ছিপিও পাওয়া গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে এখানে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।স্থানীয় লোকেরাও দেহ শনাক্ত করতে পারেনি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেই, পুলিশ ছুটে আসে।"
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অজয় পাসওয়ান বলেন, 'ধানক্ষেত থেকে ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে। শুনেছি গণধর্ষণ হয়েছে। আশেপাশে চাকু সহ অনেক কিছু পাওয়া গিয়েছে। এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা, ধিক্কার জানাই।'
তিনি বলেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে, পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের কাছ থেকে ছাড় পেলে তবেই তো আইন শৃঙ্খলা ঠিকঠাক দেখে রাখবে পুলিশ। পুলিশ যদি নিজের ভূমিকা ভালোভাবে পালন না করে তাহলে আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন চালাবো।' হরিশ্চন্দ্রপুরে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা আব্দুস শোভনের মতে, 'বিহারের দুষ্কৃতীরাই এই কান্ড ঘটিয়েছে। এখানকার তৃণমূলের নেতারা তো বিহার থেকে দুষ্কৃতীদের এনে মদত দেয়। তাই তাদের এত বাড়াবারন্ত। এর জন্য প্রশাসনও দায়ী। প্রশাসন সজাগ না হলে এই ধরনের ঘটনা আরও দেখতে হবে।'
অপরদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, 'ঘটনা আমরা সকালেই শুনেছি। এটা খুবই লজ্জাজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা। এটা কখনই বাংলায় কাম্য না।' তাঁর অভিযোগ, বিহার থেকে দুষ্কৃতীরা এসে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ ও হরিশ্চন্দ্রপুরের পুলিশ পশাসনকে বলব আরও বেশি সজাগ হতে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তির আবেদন করছি। প্রয়োজনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনেও নামতে পারি। কারণ বিহার থেকে এর আগেও কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা ঢুকে চুরি-ডাকাতি করে গিয়েছে।'
এদিকে পুজোর মুখে এই ধরণের ভয়াবহ ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। পুজোর মধ্যে অনেকেই রাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়, ঠাকুর দেখতে যায়। সেক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়! এই আশঙ্কাই ঘিরে ধরেছে সকলকে।
No comments:
Post a Comment