৬ ইঞ্চি পুঁটে কালীর কথা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 10 November 2023

৬ ইঞ্চি পুঁটে কালীর কথা


৬ ইঞ্চি পুঁটে কালীর কথা 


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ১০ই নভেম্বর, কলকাতা: উত্তর কলকাতার বড়বাজারের একটি অঞ্চলের নাম পোস্তা। আর এই পোস্তা এলাকায় গেলেই দেখা মিলবে এক মন্দিরের। শ্রী শ্রী পুঁটে কালী মাতার মন্দির। যে মন্দির এবং তার গর্ভগৃহে অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে নিয়ে চর্চা চলে আজও। বহু কাহিনীর ভিড়ে এই পুঁটে কালি হয়ে ওঠে উত্তর কলকাতার এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কেন ও কোন কাহিনী জড়িয়ে এই মন্দির এবং মাতৃ প্রতিমার সঙ্গে? 


শোনা যায় প্রায় ৫০০ বছর আগে গঙ্গা তীরবর্তী পোস্তা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মন্দির। হুগলির বাসিন্দা তন্ত্রসাধক মানিক চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পুজো পেতে শুরু করেন পুঁটে কালি। মোগল সম্রাট আকবরের আমলেই গোলপাতার ছাউনি দিয়েই গড়ে ওঠে মন্দির। যে মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসন পেতে দেবীর পুজো শুরু করেন মানিক। কিন্তু কেউ কেউ বলেন মানিক চন্দ্র নন তার বংশধর খেলারাম বন্দোপাধ্যায়ই নাকি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। যদিও পুঁটে কালীর মন্দির তো বটেই, এই দেবী মূর্তির নাম নিয়েও রয়েছে একাধিক কাহিনী। মাত্র ৬ ইঞ্চি উচ্চতার কালীর নাম কেন পুঁটে তা নিয়ে রয়েছে কথকতার ভিড়। 


কথিত আছে একদিন দেবীর পুজোর সময় হোম যজ্ঞ করছিলেন খেলারাম। সেইসময় নদীর কাছের একটি খাল থেকে একটি পু্ঁটি মাছ হোমের আগুনে এসে পড়ে। সেই আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও যখন সেই মাছকে ফের জলে দেওয়া হয়, তখন সেই মৃত মাছ প্রাণ ফিরে পায় দেবীর কৃপাতেই। সেই থেকেই দেবীর নাম হয় পুঁটি কালি। তারপর সেই পুঁটি নাম পরে হয়ে যায় পুঁটে।


সারা বছর দেবীর পুজো তন্ত্রমতে হয়। কালীপুজোর রাতে দেবীকে ভৈরবী রূপে আরাধনা ও পঞ্চ ম কারে পুজো করা হয়। কালীপুজার পরের দিন মন্দিরে কুমারী পুজো এবং অন্নকূট উৎসব হয়।


পু্টে কালীর ভোগেও রয়েছে নানা অভিনবত্ব। জানা যায় পুঁটে কালীকে নিরামিষ ও আমিষ দু ধরনের ভোগই দেওয়া হয়। নিরামিষ ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, দু ধরনের সবজি, চাটনি, পায়েশ আর আমিষ ভোগে দেওয়া হয় পুঁটি, রুই, গোয়াল, ভেটকি, ইলিশ মাছ।


এই কালীর আরো একটি বিশেষত্ব হলো মাতৃ প্রতিমার পাশেই রয়েছে শীতলার মূর্তি। কালীর সঙ্গে শীতলা পূজারও রীতি রয়েছে এই মন্দিরে।


পোস্তায় তারাসুন্দরী পার্কের বিপরীতে কালী কৃষ্ণ ঠাকুর রোডে এই মন্দিরটি ১৫৫৮ সালে পাকা হয়। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই মন্দির নিয়ে সমস্যা থাকলেও তা মিটে যায় অবশেষে। মন্দিরের বর্তমান বিগ্রহটি কষ্টিপাথরের। শোনা যায় এর আগের মূর্তিটি বৃন্দাবন থেকে এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেব বংশী ও কোনো এক জমিদারের কর্মচারী। মন্দিরে থাকা তিনটি চক্র, ত্রিশূল ও পতাকা নিয়েও রয়েছে একাধিক জনশ্রুতি। যদিও পু্ঁটেকালীকে ঘিরে ঠিক বেঠিক নানা বিতর্কের মাঝে রয়েছে একাধিক কাহিনী।


বিশ্বাস করা হয়, এই কালির কাছে মানত করলে মেলে ফল। আর সেই আশাতেই আজও ভিড় জমে এই মন্দিরে। শনি, মঙ্গল ও অমাবস্যার দিন বিশেষ পুজোর বন্দোবস্ত হয় এই মন্দিরে। আজও খেলারামের বংশধরেরাই রয়েছে পুঁটেকালীর সেবাইত হিসেবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad