শুরুর দু'দিনের মাথায় মেলা বন্ধের নির্দেশ, বাজি বিক্রি করতে এসে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা, হাওড়া, ০৮ নভেম্বর: বাজি বিক্রি করতে এসে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। প্রশাসনের অনুমতিতে হাওড়ার ডুমুরজলার রিং রোডে খোলা অস্থায়ী বাজি বাজার চালুর দুই দিনের মাথায় বন্ধের নির্দেশ।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী হাওড়া শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে বসেছে এই বছরের 'বাজি মেলা'। খেটে খাওয়া বহু মানুষ সামান্য বাড়তি আয়ের জন্য ধার দেনা করে এই বাজি বাজারে নিজেদের দোকান দিয়েছে। আর মেলা শুরুর দ্বিতীয় দিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল এই ব্যবসায়ীদের মাথায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, হাওড়া ডুমুরজলার রিং রোডে অস্থায়ী বাজি মেলার বিরুদ্ধে এল নির্দেশিকা। আর সেই নির্দেশিকাকে নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়াল বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বাজি বাজার শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে বাজার বন্ধের নির্দেশিকাকে ঘিরে চূড়ান্ত হতাশার ছবি বাজি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া সমস্ত সুরক্ষা বিধি ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মতোই শুধুমাত্র পরিবেশ বান্ধব সবুজ বাজির ওপরে ভরসা করেই চালু হয়েছিল ৫৫টি অস্থায়ী দোকান নিয়ে ডুমুরজলা রিং রোডের বাজি বাজার। মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানান হয়, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এখানে বাজার বন্ধ করতে হবে, সেক্ষেত্রে তারা দাসনগরে চলে যেতে পারেন। এই ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাজি মেলার উদ্যোক্তা সহ ব্যবসায়ীরা।
শিবপুর শালিমার এলাকার বাসিন্দা মুমতাজ বেগম বলেন, 'আমরা ধার-দেনা করে এখানে দোকান দিয়েছি। মেলার জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন বলা হচ্ছে এখান থেকে উঠে গিয়ে দাসনগরে যেতে। এখানে টাকা দিয়ে বসতে দিচ্ছে না, আর দাসনগরে কোথায় যাব? সেখানে কেন বসতে দেবে? আমরা চাই যে পুঁজি বিনিয়োগ করেছি মেলাতে, সেই টাকাটা উঠে আসুক, না হলে আমার ক্ষতি হয়ে যাবে।'
অপর এক বাজি ব্যবসায়ী লক্ষ্মী সাঁতরা অভিযোগের সুরে বলেন, 'আমাদের থেকে ত্রিশ হাজার টাকা নিয়েছে বাজি বাজার কমিটি। আমরা কেউ বাড়ির সোনা বন্ধক দিয়ে, কেউ বাড়ির দলিল বন্ধক দিয়ে টাকা লাগিয়েছি। দোকানের জন্য তিরিশ হাজার টাকা দিয়েছি, বাজি কিনতে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখানে দুদিন বসার পরই বলছে উঠে যেতে। আমরা কোথায় যাব! আমাদের আরও তিনদিন সময় দিক। তারপরে আমরা চলে যাব।'
ডুমুরজলা বাজি মেলার ১৭ নম্বর স্টলের ব্যবসায়ী সৌমজিত নাহা জানান, 'কোনও পরিবেশবিদ সুপ্রিম কোর্টে এই মেলা বন্ধের জন্য মঙ্গলবার মামলা করেন। তার মামলার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বাজি মেলা বন্ধের নির্দেশিকা জারি করে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ও এই মেলার তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই বছর অন্তত আমাদের মেলা চালু রাখা হোক। সামনের বছর যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা বসবো না।'
মঙ্গলবার রাত থেকে ডুমুরজলা রিং রোডে বাজি বাজারকে কেন্দ্র করে যথেষ্টই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে ও জেলা শাসকের উপস্থিতিতে উদ্বোধন হওয়া বাজি বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্টই অনিশ্চিয়তার মুখে মেলার ৫৫ জন বাজি বিক্রেতারা।
এই বাজি মেলা প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের নগরপাল প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী বলেন, 'সাধারণ মানুষের সুরক্ষার প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ডুমুরজলা থেকে বাজি বাজার সরিয়ে চ্যাটার্জী হাট এলাকাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডুমুরজলা রিং রোডে বাজি বাজারের অনুমতি দেওয়া হলেও সেখানে কিছু অসুবিধার কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও পরিবর্তন এলে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বদল হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গতকালই চ্যাটার্জী হাট থানা এলাকা পরিদর্শন করে আজ থেকে সেখানে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে সেখান থেকেই বাকি দিন গুলো বাজি বাজার চলবে।' যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিষয়ে নগরপাল কোনও মন্তব্য করেন নি।
No comments:
Post a Comment