কালীপুজোর রাতে ভেসে আসে নূপুরের ধ্বনি, দেখা যায় দেবীকেও
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৮ই নভেম্বর, কলকাতা: কালীপুজোর রাতে মন্দির থেকে মায়ের পায়ের নূপুর ধ্বনী শুনতে পাওয়া যায়। দেবীকে নাকি হেঁটে বেড়াতে দেখেছেন অনেকেই। রায়গঞ্জ বন্দরের আদি কালীবাড়ির পুজো নিয়ে এমনই অনেক গল্প রয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো এই কালীপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ভক্তি এবং নিয়ম-নিষ্ঠা, আরম্ভর নয়। প্রাচীনত্ব এবং দেবীর অলৌকিক মহিমার টানে আজও কালীপুজোর রাতে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং এবং ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ ভিড় করেন রায়গঞ্জ বন্দরের আদি কালীবাড়িতে। বলা যায় উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় কালীপুজো এটি।
রায়গঞ্জ বন্দরের এই কালী বাড়ির পুজো ঠিক কত বছর আগে শুরু হয়েছিল তা কারও জানা নেই। শোনা যায় প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে এই পুজোর প্রচলন হয়। সিদ্ধি লাভের জন্য পাঞ্জাব প্রদেশের এক সাধু হেঁটে এসে কুলিক নদীর তীরে বন্দর লাগা একটি গাছের নিচে পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে সাধনায় বসেন এবং সিদ্ধি লাভও করেন তিনি। তারপরে তিনি চলে যান। সেই থেকেই এই পঞ্চমুন্ডীর বেদিতে কালীপুজো শুরু হয়।
তারপর নানা অলৌকিক ঘটনার পর এখানে মন্দির নির্মাণ হয়েছে। মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, কথিত আছে বেদী প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে মা হেঁটে বেড়াতেন। কালীপুজোর রাতে মায়ের পায়ের নুপুর ধ্বনি শোনা যেত। এরপর তৎকালীন দিনাজপুরের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দির নির্মাণের পর বামাক্ষ্যাপার উত্তরসূরী সাধক জানকীনাথ চট্টোপাধ্যায় ১২১৬ সালে বেনারস থেকে মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি এনে মন্দিরে স্থাপন করেন। তখন থেকেই এই মন্দিরে নিত্য পুজো শুরু হয় এবং কালীপুজোর রাতে মায়ের বিশেষ পুজো হয়।
স্থানীয়রা জানান, এই আদি মন্দিরের মা কালী খুবই জাগ্রত। কায়মনোবাক্যে কিছু প্রার্থনা করলে তা পূরণ হবেই। প্রাচীনকালে বনিকেরা কুলিক নদী দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যাবার সময় এই মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন। কালী পূজার রাতে পড়শী রাজ্য থেকেও ভক্তরা এখানে আসতেন। স্থানীয় বাসিন্দা ভগবান প্রসাদ সাহার কথায় আগে কালীপুজো রাতে মন্দিরের পাশের ঘাটে নৌকোর ভিড় লেগে যেত। আজও যারা এই মন্দিরের কথা জানেন তারা মনস্কামনা পূরণের জন্য এখানে আসেন। কালী পূজার রাতে কলকাতা সহ অন্যান্য জেলার পাশাপাশি ওড়িশা, বিহার এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন রায়গঞ্জ বন্দরের এই আদি কালীবাড়িতে।
তবে করোনার জন্য ভক্তের সংখ্যা অনেকটা কমেছে বলে জানান পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান এখানে তন্ত্র মতে দেবীর পুজো হয়। কালীপুজোর দিন শোল মাছ দিয়ে মাকে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া দেওয়া হয় পাঁঠাবলিও। গত বছরের মত এবারেও করোনা বিধি মেনে পুজোর আয়োজন করছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা।
No comments:
Post a Comment