প্রভাবশালীরাই জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় কী বিবাদ-মারামারি-খুন! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 18 November 2023

প্রভাবশালীরাই জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় কী বিবাদ-মারামারি-খুন!


প্রভাবশালীরাই জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় কী বিবাদ-মারামারি-খুন!



নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ১৮ নভেম্বর: সন্তোষপুরের জমি বিবাদের জেরে বোমা হামলায় প্রাণ গিয়েছে আমডাঙা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রুপচাঁদ মণ্ডলের। গ্রেফতার হয়েছে পাশের বোদাই পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা তোয়েব আলীর ছেলে আনোয়ার আলী। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং ও আমডাঙার বিধায়ক রফিকার রহমান খুনের ঘটনায় বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। স্থানীয়দের দাবী, জমিই কেড়ে নিল ভূমি পুত্রকে। জমি ব্যবসার আড়ালে আছে নানা ধরণের ব্যবসায়ীক সমীকরণ। নেতারাও জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দাপুটে নেতা কর্মীদের বেশ পছন্দ করেন। 


বারাসতের ময়না থেকে আমডাঙার রাজবেড়িয়া ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের দুপাশের জমি ঘিরেই রাজনীতি। এখানকার জনবসতি ঘিরে ভোট রাজনীতি আর চাষের জমি ঘিরে ব্যবসা। স্থানীয় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাংশ জমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জমি ব্যবসা করেন। 


স্থানীয় সূত্রের খবর, এক দশক আগে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ শুরু হতেই জমির দাম এক লাফে বেড়েছে কয়েকগুন। যদিও জমি জটে আটকে আছে সন্তোষপুর থেকে রাজবেড়িয়া পর্যন্ত এলাকার রাস্তা সম্প্রসারণ। তবুও চারচাকা গাড়ির শো রুম, স্কুল, আবাসন, ধাবা, রেষ্ট্রুরেন্ট ও কারখানা তৈরির জন্য উদ্যোগপতি ব্যবসায়ীরা কিনেছেন জমি। 


স্থানীয়দের দাবী, বারাসতের ময়না এলাকার পর থেকে সন্তোষপুর পর্যন্ত এলাকায় দুই দশক আগে থেকে শুরু হয় জমি কিনে বাগান বাড়ি করার হিড়িক। বাম আমলে জমিতে বোর্ড ঝুলিয়ে লেখা থাকত জমি বিক্রির কথা ও যোগাযোগ নম্বর। স্থানীয়দের দাবী, ওই সময় জমি কেনা বেচা করলে সরাসরি করা যেত না। রাজনৈতিক নেতাদের অনুগামীদের মাধ্যমেই কিনতে বেচতে হত। জমির নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রভাবশালী নেতাদের হাতে। ১১ সালে শাসন ক্ষমতা বদল হলেও জমি ব্যবসার পদ্ধতির কোনও বদল হয়নি। জমি মালিকদের থেকে ব্যবসায়ীরা জমি বিক্রির ক্ষমতা কাগজে কলমে নিয়ে সেই জমি একাধিকবার বিক্রি করা হত। জমির মূল্য বৃদ্ধি ও কালো টাকা সাদা করা হত এবং দলের বিভিন্ন স্তরে দানের টাকার উৎস ছিল আমডাঙা এলাকার জমি ব্যবসা। 


বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাদের দাবী, দল করতে টাকা সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে দিতে হয়। এমনকি টিকিট পেতে এবং পঞ্চায়েত, সমিতি ও জেলাপরিষদে পদ পেতে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। জমি বিক্রি, ব্যবসা ওই টাকার উৎস। প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমানও আমডাঙা এলাকার জমি কিনেছিল চাল-গমের কল ও রেশনের আটা প্রস্তুত কারখানা করতে। যদিও পরে ওই জমিতে কিছুই করেননি বাকিবুর। 


তৃণমূল সূত্রের দাবী, শুধু রুপচাঁদ নয়, আমডাঙা ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা জনপ্রতিনিধিরা এখানকার জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জমি বিবাদ ঘিরে হামলা, মারধর ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের দলীয় কার্যালয়ে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জমি বিবাদের মিমাংসা বৈঠক হয়েছে। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পঞ্চায়েতের সদস্য বলেন, "উচ্চ নেতৃত্বকে বহুবার বলা হয়েছে। বিবাদ মেটাতে কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। নিলে আজ রুপচাঁদকে মরতে হত না। স্থানীয় বিধায়ক কড়া পদক্ষেপ নিতে বারংবার ব্যর্থ হয়েছেন।"


রুপচাঁদের বাড়িতে বসে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, "জমি কেনা বেচার ব্যবসা যে কেউ করতে পারে। তেমনই যে কেউ বিক্রিও কিনতে পারেন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক নেই। এনিয়ে কোনও কোন্দল দলে নেই।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad