মুখে ট্যাটু আঁকা বাধ্যতামূলক যেখানে! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, 18 November 2023

মুখে ট্যাটু আঁকা বাধ্যতামূলক যেখানে!


মুখে ট্যাটু আঁকা বাধ্যতামূলক যেখানে!


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ১৮ই নভেম্বর, কলকাতা: বর্তমান যুগে ট্যাটু এক ধরনের ফ্যাশন। কিন্তু এমন এক জায়গা আছে যেখানে ট্যাটু করা বাধ্যতামূলক। সেখানকার মেয়েদের মুখে ট্যাটু আঁকাতে হয় শিশুকালেই। মিয়ানমারের পার্বত্য অঞ্চলের চীন রাজ্যের নারীরা তাদের মুখভর্তি ট্যাটুর জন্য বিখ্যাত। পুরো বিশ্বে এই নারীদের তাদের ট্যাটুর জন্য আলাদাভাবে দেখা হয়। প্রায় ৫ লাখ মানুষের বাস এই চীন রাজ্যে। ১২ থেকে ১৪ বছরের এই উপজাতির প্রত্যেক মেয়ের মুখে এঁকে দেওয়া হয় ট্যাটু, অর্থাৎ তাদের চেহারা বিকৃত করে দেওয়া হয়। 


প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে চীন স্টেটের এই রীতি। মিয়ানমারের পার্বত্য অঞ্চলে শত শত বছর ধরে বাস করে আসছে এই উপজাতির মানুষ। কয়েকশ বছর ধরে রাজ্যটির বাসিন্দারা আধুনিক পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নই ছিল বলা যায়। তবে পর্যটকদের আনাগোনায় আজ তারা সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে।


ট্যাটু করার পিছনের কারণ হিসেবে প্রচলিত রয়েছে এক কাহিনী। একবার এক বার্মিজ রাজা ঘুরতে এসেছিলেন এখানে। সেই সময় এক নারীর রূপে মুগ্ধ হন রাজা। কিন্তু সেই নারী ছিলেন বিবাহিতা। তবুও তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজার জন্য। একপর্যায়ে পালিয়ে আসতে সমর্থ হন সেই নারী। কিন্তু শঙ্কা তার কাটে না! কখন যেন রাজার লোকেরা আবার ধরে নিয়ে যায় তাকে। আর তখনই ছদ্মবেশ ধারণ করতে নিজের মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেন সেই নারী। কারণ সেই রাজা নিজের ইচ্ছামত যে কোনো মেয়েকেই ধরে নিয়ে যেতেন, এতে তাদের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক। তবে মেয়েটিকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হতো না, রাখা হতো উপপত্নী করে। যখন ইচ্ছা একজনকে ত্যাগ করে আবার নতুন কোনো মেয়েকে সঙ্গী করতো সেই রাজা। রাজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া কারো সাধ্য ছিল না। শেষ পর্যন্ত সম্ভ্রম রক্ষা করতে ট্যাটু এঁকে মুখমন্ডল বিকৃত করার চর্চা শুরু করেন এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা। সবাই জানতো রাজকীয় শক্তির বিরোধিতা মানেই বিপদ, আর তাই তারা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে এই পথ বেছে নেয়। এতে ট্যাটু শিল্পে সৃজনশীল হয়ে ওঠে চীন স্টেটের এই নারীরা। এরপর মুখে ট্যাটু রাখা তাদের সংস্কৃতিরও অঙ্গ হয়ে ওঠে। 


একবার ট্যাটু করাতে প্রায় পুরো দিন সময় লেগে যায়। এই ট্যাটু আঁকাতে ভয়ানক যন্ত্রনাও হতো, বিশেষ করে চোখের পাতায় ট্যাটু করার সময়। শরীরের যে অংশে ট্যাটু করা হয় সেই অংশে লোহা দিয়ে, তার ওপর গরু, ছাগল বা ভেড়ার চর্বি লাগানো হয়। একবার ট্যাটু আঁকলে তা ছয় থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়। তারপর আবার এইভাবেই ট্যাটু আঁকা চলতে থাকে জীবনের শেষ পর্যন্ত। বেশিরভাগ নারীই ট্যাটু আঁকে মাকড়সার জালের মতো করে। তবে এলাকাভেদে এই ট্যাটুর নকশাও আলাদা হয়। নকশা দেখে বলে দেওয়া যায় কোন্ নারী কোন্ এলাকার। ছটি আলাদা জাতি আছে তাদের মধ্যে। তারা কপালে ইংরেজি বি,ডি ও ওয়াই অক্ষর আঁকেন। তারা ট্যাটু আঁকতে লোহার দণ্ড ছাড়াও পাতা, ঘাসের কান্ড, বেতের কাঁটা ও কাচের টুকরো ব্যবহার করেন। কালি তৈরি হয় পশুর চর্বি পুড়িয়ে। পরে এই প্রথা পরিণত হয় এক চিত্তাকর্ষক শিল্পে। এটি হয়ে দাঁড়ায় চীন স্টেটের নারীদের গৌরবের বিষয়।


তবে নতুন প্রজন্ম দিন দিন বিরক্ত হয়ে পড়ছে এই প্রথার প্রতি। নিজেদের সুন্দর মুখমন্ডল আর বিকৃত করতে চায় না তারা। মিয়ানমার সামরিক সরকার ট্যাটু আঁকলে তার ওপর জরিমানা চালু করেছিল। সেই ভয়েও আর কেউ এখন ট্যাটু আঁকতে চায় না। হয়তো কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই এই প্রথাটি শেষ হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad