জেনে নিন 'বুড়িমা চকলেট বোম' এর 'বুড়িমা' আসলে কে?
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৮ই নভেম্বর, কলকাতা: বুড়িমার চকলেট বোম ছাড়া কালীপুজো অসম্পূর্ণ। জানেন বুড়িমার চকলেট বোম এর বুড়িমা আসলে কে? কিভাবে জন্ম হলো বুড়িমার এই আতশবাজির? শুনুন বুড়িমার অজানা কাহিনী। সামনেই কালীপুজো। আর কালীপুজোর রাতে সকলেই নানা রকম বাজি নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেন। এক একটি বাজির নাম একেক রকম।
এই বাজির কথা বললে সবার আগে মনে পড়ে যায় একটাই নাম, বুড়িমার চকলেট বোম। যার জনপ্রিয়তা একেবারে আকাশছোঁয়া। কিন্তু জানেন কি এই বুড়িমার নামে বোমের নামকরণের পিছনে লুকিয়ে আছে এক লম্বা কাহিনী। জানেন কে এই বোমার বুড়িমা? চলুন জেনে নেওয়া যাক তাকে।
বুড়িমা নামে পরিচিত এই সফল মহিলার আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। তবে লোকমুখে তিনি বুড়িমা নামেই পরিচিত। তার আদি বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের পর স্বামী সন্তানদের দিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার ধলদিঘির সরকারি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর একদিন ছেলেমেয়েরা ছোট থাকতেই মৃত্যু হয় তার স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাসের। শাক-সবজি ঘটি- বাটি যা পারেন তাই বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালাতে শুরু করেন অন্নপূর্ণা দাস। এমনকি অভুক্তও থেকেছেন অধিকাংশ সময়। কঠিন জীবনের লড়াই সামলাতে একসময় ধলদিঘি থেকে গঙ্গারামপুরে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে বিড়ি বাঁধা শেখেন সনাতন মন্ডলের কাছে এবং আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন ছোট একটি বিড়ি বাঁধার কারখানা।
এইসবের মধ্যেই তিনি তার মেয়ের বিয়ে দেন হুগলির বেলুড়ে। সেই সূত্রেই মেয়ে জামাইয়ের কাছে এসে হরকুসুম গাঙ্গুলীর কাছ থেকে তিনি শেখেন আলতা-সিঁদুর বানানোর কাজ। আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা আলতা-সিদুর ব্র্যান্ডও তৈরি হলো। তারপর একবার কালীপুজোয় তিনি ঠিক করলেন বাজির ব্যবসা করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাজি কিনে দোকান সাজালেন, কিন্তু সেই সময় বাজি বিক্রির অনুমতি ছিল না। তাই তার দোকান ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু হার না মেনেই কিছুদিনের মধ্যেই তিনি অনুমতিপত্র জোগাড় করে ফেললেন। কিন্তু বাজি কিনে বিক্রি করতে অনেকটাই টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল তার। তাই তখন তিনি ঠিক করেন নিজেই বাজি তৈরি করবেন। কিন্তু বাজি তৈরি শেখাবে কে? তখন অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গে আলাপ হয় বাঁকুড়ার আকবর আলির। এবং তিনিই তাকে বাজি তৈরীর কৌশল শিখিয়েছিলেন। একটু একটু করে সবকিছুই শিখে ফেলেছিলেন অন্নপূর্ণা দেবী। আর তাতেই বাজিমাত। আর এই ভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্র্যান্ড বুড়িমার।
No comments:
Post a Comment