সদ্যোজাতদের ফেলে কেন চলে যায় মা-কচ্ছপ? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 8 November 2023

সদ্যোজাতদের ফেলে কেন চলে যায় মা-কচ্ছপ?


 সদ্যোজাতদের ফেলে কেন চলে যায় মা-কচ্ছপ? 




নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা, ০৮ নভেম্বর: মন্থর গতির প্রাচীন এক প্রাণী আমাদের অতি পরিচিত কচ্ছপ। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এরা পৃথিবীতে বিচরণ করছে। তবে, এরা এমন এক অদ্ভুত কাণ্ড করে, যা দেখলে বিভ্রান্ত হবেন যে কেউ। পাশাপাশি এটাও ভাববেন, কেন কচ্ছপ এতটা নির্মম! কিন্তু কী এমন করে কচ্ছপ? সাধারণত সমুদ্র তীরে সদ্যোজাতদের ফেলে রেখে চলে যায় এই কচ্ছপ। এরপর আর ফিরেও তাকায় না তাদের দিকে। শিশু-কচ্ছপরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করা শিখে নেবে, এমনই মনোভাব মা-কচ্ছপের। অন্যান্য প্রাণীরা যেখানে জীবন দিয়ে নিজের সন্তানদের আগলে রাখে সেখানে কচ্ছপ কেন জন্মের পরপরই তাদের সন্তানদের ত্যাগ করে? প্রশ্নটা এখানেই। 


ইংরেজিতে একটা কথা আছে, Survival of the fittest অর্থাৎ যোগ্যতমের বেঁচে থাকা। কচ্ছপরাও প্রতিকূল পরিবেশে তাদের অসাধারণ Survival-এর জন্য পরিচিত। তবে যখন প্রজননের কথা আসে তখন তারা আর স্ট্র্যাটেজি নামক একটি কৌশল অবলম্বন করে। এর মানে তারা প্রথমে একই সাথে অনেকগুলো সন্তান জন্ম দেয়। এরপর পিতা-মাতার ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করে না তারা, যত্ন তো অনেক দূরের কথা। উল্টো সন্তানদের নিজের রাস্তা নিজে তৈরি করার জন্য অন্য কোথাও ফেলে আসে। শুনতে নির্মম মনে হলেও এখানেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য। 


নিজের রাস্তা নিজে খুঁজে নেওয়া বা নিজেকে রক্ষা করার মত সামর্থ্য অর্জনের জন্যই মূলত তার সন্তানদের একা রেখে আসে কচ্ছপ-মায়েরা। এই পদ্ধতিতে কিছু সংখ্যক হলেও শিশুরা বড় ও‌ প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু কীভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক। 


কচ্ছপ সাধারণত সমুদ্র তীর থেকে কিছুটা দূরে বালি খুঁড়ে সেখানে ডিম পাড়ে। এই কৌশলে একাধিক সুবিধা মেলে; প্রথমত, এতে জোয়ারের জলে ডিম ভেসে যাওয়া বা শিকারির হাতে পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই বাচ্চাগুলো জন্মের পর ভূমিতেই তাদের যাত্রা শুরু করতে পারে, যেখানে জলজ শিকারিদের আনাগোনা কম। অতএব শিকারিদের এড়ানোর এটা একটি কার্যকরী কৌশল। 


পাখি, কাঁকড়া সহ কচ্ছপের অসংখ্য শত্রু রয়েছে, যারা সাধারণত জলের কাছাকাছি বেশী ঘুরে বেড়ায়। শিকার পেলেই ধরে ফেলে। তীর থেকে কিছুটা দূরে যাওয়ায় ডিম ফুটে বাচ্চাগুলো স্বাধীনভাবে জলের দিকে ছুটতে পারে। এ পথেও অবশ্য ঝুঁকি রয়েছে। পথ চলতে চলতেই শিকারিরা হামলে পড়ে। প্রায় সময় জলে গিয়ে পৌঁছাতে পারে হাতেগোনা কয়েকটি শিশু-কচ্ছপ। তবে কিছুটা হলেও শিকারিদের হুমকি এড়াতে পারে শিশুগুলো। 


সেই হিসেবে, কচ্ছপ মায়েরা যে একেবারেই দায়িত্ব পালন করে না, তা কিন্তু নয়। তারা তীর থেকে দূরে এসে বালি ঘুরে বাসা বানায় এবং সেখানেই ডিম পাড়ে। এরপর এটাও নিশ্চিত করে যে ডিমগুলো যেন ভালোভাবে ঢাকা ও নিরাপদ থাকে। সেখানে একবার সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে অবশ্য কচ্ছপ-মায়ের দায়িত্ব শেষ। তখন শুরু হয় প্রকৃতির দায়িত্ব। এরপর ডিম ফুটে বাচ্চাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হয়। প্রকৃতি যেদিকে রাস্তা দেখায়, সেদিকেই ছুটতে হয়। তাদের মাঝে অন্তত এই জ্ঞানটুকু থাকে, কোন পথে যেতে হবে। সেই সাথেই থাকে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা-শক্তি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad