অভিষেক লবির হাতেই কী ব্যাটন দিলেন মমতা?
উত্তর ২৪ পরগনা: কোর কমিটি ছিল, তবে কেন ফের কেন নতুন কোর কমিটি ? এই প্রশ্ন নিয়েই কর্মী সভা থেকে বাড়ি ফিরলেন চাকলায় আসা উত্তর ২৪ পরগনার পুরসভা, পঞ্চায়েত, জেলাপরিষদের জনপ্রতিনিধি ও সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। রাত হতেই বহু নেতা জনপ্রতিনিধি যোগাযোগ শুরু করলেন কোর কমিটির চার আহ্বায়কের সঙ্গে। তাদের অনুমান আগামীতে তৃণমূলের ব্যটন থাকবে নারায়ণ, সুজিত বসুদের হাতে।
চাকলার প্রকাশ্য কর্মী সভার মঞ্চ থেকে তৈরি নতুন কোর কমিটিতে নির্মল ঘোষকে চেয়ারম্যান করে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর মত মন্ত্রীদের সঙ্গে কমিটিতে রাখলেন বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের মতন অনেকেই। পরে ঢুকবেন বিধায়করা।লোকসভা ভোটের ব্যস্ততার কারণে বাদ দিলেন সাংসদদের। তৃণমূলের কোর কমিটির কয়েকজন সদস্যের দাবী, নেত্রী এদিন হয়ত বুঝিয়ে দিলেন অর্জুন, নুসরত, কাকলি, সৌগত ফের টিকিট পাচ্ছেন। বনগাঁয় মমতা বালা ঠাকুর এবার টিকিট পাচ্ছেন না।
জেলার তৃণমূল নেতাদের দাবী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন্দল থামাতে ধমক নয় সংগঠনে মিশিয়ে দিলেন। এক সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে কোন্দল মেটানোর কৌশল নিলেন তিনি। তাদের যুক্তি, এদিন নির্মল ঘোষকে রেখে চার জনের আহ্বায়ক কমিটি গড়ে দেন। সুজিত বসু দেখবেন বসিরহাট ও দমদম , পার্থ ভৌমিক দেখবেন ব্যারাকপুর, হাবড়া দেখবেন নারায়ণ গোস্বামী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কাজের সময় কাজ করবে এবং আমাকে টাইম টু টাইম রিপোর্ট দেবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ৫টি সিটেই নজর রাখবেন তারা। কোর কমিটি এদের কাছে রিপোর্ট দেবেন।"
তৃণমূল নেতাদের একাংশের যুক্তি, পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে অর্জুন সিংয়ের সম্পর্কে আদায় কাঁচকলা, নারায়ণের সঙ্গে বারাসত সংগঠনের বিরাট অংশের সম্পর্ক ভালো নয়। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতারের পর হাবড়ায় সক্রিয় হয়েছে কাকলি লবি। সুজিত বসু বসিরহাটের কোন্দল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দিদির দূতে গিয়ে দেগঙ্গায় হাতাহাতি সামাল দিতে পারেননি তিনি। কখনও খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে দ্বায়িত্ব দিচ্ছেন কোর কমিটির, আবার কখনও নারায়ণ গোস্বামীকে দেখতে বলছেন।
চাকলার কর্মীসভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে অর্জুনের সঙ্গে দুজন বাদে কথা বললেন না কেউই।বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান ও আমডাঙার বিধায়ক রফিকার রহমান কথা বলেন। সব্যসাচী দত্ত অর্জুনের মাথায় কয়েকবার হাত বুলিয়ে মুখের ভঙ্গিতে বোঝাতে চাইলেন, গরম মাথা ঠাণ্ডা করো। মঞ্চে উঠে প্রথম দফায় মমতা যাদের নাম বললেন সেই তালিকায় প্রথমেই ছিল অর্জুনের নাম। তৃণমূল নেতাদের দাবী, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ ও সুজিত বসু চাকলার সভার দ্বায়িত্ব পালন করেন অথচ নেত্রী তাদের নাম একবারও করলেন না।
পুরসভা স্তরের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াকু, খ্রিপতা, কড়া নির্দেশ, একগুয়ে নির্ভরতার জন্য জনপ্রিয়। এগুলোই তার ইউএসপি। তাঁর নির্দেশেই সব সমাধান হয়। সেসব হারিয়েছেন তিনি। এই মমতাকে অচেনা লাগল। এই আচরণ পরিণত নাকি দুর্বল বোঝা কঠিন।
তৃণমূল বিধায়কদের একাংশের দাবী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অভিষেক লবির নেতাদের হাতে কার্যত সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়ে গেলেন। ঘুরিয়ে নতুনদের তুলে আনার ইঙ্গিতও দিয়ে গেলেন। মমতা বলেন, "ছাত্র যৌবনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে তবে প্রবীণদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমি বারবার বলেছি পুরানো চাল ভাতে বাড়ে। নতুন চাল আগে বাড়ে। দু'টো চালই আমার দরকার।" প্রবীন তৃণমূল নেতাদের দাবী, নতুনদের শেখাবে প্রবীনরা।
সভা শেষে পার্থ ভৌমিক বলেন, ”আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না। আমরা উত্তর ২৪পরগনার পাঁচটি আসন জয়ের বিষয়ে ভাবছি। বাকি সব সংবাদমাধ্যম ভাবছে।“ শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”আলোচনার মাধ্যমে সব মিটবে। নেত্রী যা বলার বলে দিয়েছেন।”
No comments:
Post a Comment