কোন্দল মেটাতে বালু বিহীন নেতৃত্ব দিশেহারা, কোর কমিটির বৈঠকে বিস্তর অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ১৫ ডিসেম্বর: রেশন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু ) জেল বন্দি। এদিকে সংগঠনে গোষ্ঠীকোন্দল চরমে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাকক্ষে সমস্যা সমাধানে বিধায়ক ও সাংগঠনিক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। চার সাংগঠনিক জেলার সভাধিপতি ও বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বালু বিহীন তৃণমূল নেতৃত্ব সমাধানের সঠিক দিশা দিতে পারল না। জেল বন্দী মন্ত্রীর অভাব পূরণ করা কঠিন তা স্বীকার করেন কোর কমিটির নেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে বসিরহাটের তৃণমূল জেলা সভাপতি ডাক্তার সপ্তর্ষি মণ্ডল কোর কমিটিকে বিধায়কদের সামনে বলেন, তাঁর কথা বিধায়ক থেকে পুরসভা - পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ব্লক এবং অঞ্চল সভাপতিদের বিরাট অংশ শুনছে না। জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।
অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বৈঠকে জানান, বারাসত শহরে জননেতা নেই যে মানুষের অভাব- অভিযোগ শুনবে এবং পরিষেবা দেবে। তৃণমূলের কোর কমিটির নেতৃত্ব সমস্ত অভাব অভিযোগ শুনে লিখিত দিতে বললেন বিধায়কদের। বৈঠকে থাকা এক নেতৃত্বের দাবী, ফলপ্রসূ হয়নি বৈঠক। কোনও পরিকল্পনা দিতে পারেনি নেতৃত্ব। আইএসএফ শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতেছে। বিজেপি রাম মন্দির নির্মাণ আবেগ আটকাতে তৃণমূলের পদক্ষেপ কী হবে তার কোনও পরিকল্পনা দিতে পারেনি। অতীতে বালু এসব ক্ষেত্রে বসে মিটিয়ে দিতেন। ওঁর অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সংগঠন।
কোর কমিটির সদস্য বিধায়ক তাপস রায় বলেন, "জ্যোতিপ্রিয়র অভাব মেটাতে হবে আমাদের সবাইকে । ও এতদিন সংগঠন সামলাতো।" দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, "বালু দার হঠাৎ অনুপস্থিতির প্রভাব পড়েছে, এটা অস্বীকার করা যায় না।" ব্রাত্য বসু বলেন, "বিবাদ সব দলেই আছে। অন্য দলের নেতারা বৈঠক করলে বাইরে মারামারি হয়। তৃণমূলে তা হয় না।"
তৃণমূল সূত্রের দাবী, বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সৌগত রায়কে ফের প্রার্থী করার বিষয়ে মত দেন। জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম অর্জুন সিংকে প্রার্থী না করার বিষয়ে ঘুরিয়ে বেশ কিছু যুক্তি দেন, যা শোনেন কোর কমিটির সদস্যরা। কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শীঘ্রই ব্যারাকপুরের সাংসদের সঙ্গে বিধায়কও অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। এবিষয়ে তাপস রায় বলেন, "সংগঠনের সমস্যা সংগঠন মেটাবে।"
তৃণমূল সূত্রের দাবী, বনগাঁয় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পরপর হার। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রয়োগ করতে কেন্দ্রের রুল ফ্রেম করার উদ্যোগের সঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণের প্রভাব এই কেন্দ্রে ফেলবে বেশি। এই পরিস্থিতিতে জনসংযোগ এবং ভোটারদের মন জয় করতে ব্যর্থ বিধানসভা চিহ্নিত করা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। গাইঘাটা,বনগাঁ দক্ষিণে হার বাঁচাতে শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয় এদিন।
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জিতেছে বিজেপি প্রার্থী। এনআরসি ও নাগরিকত্বের ভয়ে মানুষ গত লোকসভা ও বিধানসভায় জিতিয়েছে।" উল্লেখ্য বিশ্বজিৎ নিজে বিজেপির টিকিটে বাগদা বিধানসভা থেকে জেতে।পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনিও কি তাহলে ভোটারদের ভুল বুঝিয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যান তিনি।
এদিনের বৈঠকে সংগঠনের নেতা ও পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের অসচ্ছতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবিষয়ে কোর কমিটির সদস্য তাপস রায়, রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা কড়া পদক্ষেপ করার বিষয়ে আলোচনা করেন। সূত্রের দাবী, উত্তর ২৪ পরগনায় পাঁচটি লোকসভা আসন। বিধায়ক সভা ধরে দূর্বল কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। বেশ কিছু বিধানসভায় কোন্দল রয়েছে চরমে। হাবড়া, গাইঘাটা ও বনগাঁ দক্ষিণে হার বাঁচাতে নতুন কমিটি গঠন আর দেগঙ্গা, হাড়োয়া, মিনাখা বিধানসভা কেন্দ্রের আভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে একমত হয়েছেন কোর কমিটির সদস্যরা।
No comments:
Post a Comment