চুরি যাচ্ছে কোপাই!
নিজস্ব সংবাদদাতা, বীরভূম, ১০ জানুয়ারি: পুকুর চুরির কথা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু নদী চুরি হয়ে যাচ্ছে এ কথা শুনেছেন কখনও ? অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! তবে অবাক হলেও কিন্তু এটাই এখন বাস্তব। রবীন্দ্রনাথের প্রতিবেশিনী সেই কোপাই নদী গহ্বর দখল করে চলছে অবৈধ বহুতল নির্মাণ। সরকারি ভাবে কোনও অনুমতি না নিয়ে কোপাই নদী দখল করে দিনের আলোর পাশাপাশি রাতের অন্ধকারে লাইট জ্বালিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে নির্মাণ কাজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক দলের। বিজেপি অবশ্য বলছে তৃণমূলের দ্বারা সবই সম্ভব।
ঐতিহ্য ক্ষেত্রের আওতায় যদিও নেই, কিন্তু খোয়াইয়ের প্রকৃতি আর কোপাই নামের ছোট নদী ছাড়া কি শান্তিনিকেতন পূর্ণ হয়? ইউনেস্কোর সম্মান প্রাপ্তির সময়ে এই দুই জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন স্থানীয় এবং শান্তিনিকেতনবাসীদের একাংশ। তাঁদের জিজ্ঞাসা, কোথায় কোপাইয়ের স্ফটিক জল? খোয়াইও কি হারিয়ে যাচ্ছে না? প্রশাসন অবশ্য দাবী করেছে, সম্পদ নষ্টের খোঁজ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শান্তিনিকেতনের পাশ দিয়ে কোপাই নদী বয়ে গিয়েছে। গোয়ালপাড়া নদী সেতু-সংলগ্ন নদীবক্ষ দখল করে অবৈধ নির্মাণ কাজ চলছে। প্রশ্ন করা হলে কর্তৃপক্ষের কাছে সদুত্তর নেই। বিনা অনুমতিতে দিনের আলোয় চলছে কোপাই নদীর জীব হত্যার কাজ। ৩৮ টি পিলার করে অট্টালিকার কাজ চলছে ইতিমধ্যে। প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে ধীরে ধীরে এই ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে অসাধুচক্র।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক দল তৃণমূল বলছে, 'বিষয়টা আমরা দেখছি। নির্মাণ অবৈধ হলে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় কাজ বন্ধ করে দেব।' স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বর দাবী, দ্রুত এই অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে বীরভূমের মানচিত্র থেকে কোপাই নদী হারিয়ে যাবে। এখানে বড় অসাধুচক্র কাজ করছে। সম্পূর্ণ বিষয়টি চলছে তৃণমূল ও প্রশাসনের মদতে।
বীরভূমে কোপাইয়ের অনেক রূপ। লাভপুরে হাঁসুলি বাঁক, কঙ্কালীতলার শ্মশানের পিছন দিয়েও বয়ে গিয়েছে এই নদী। তবে ছোট নদীর যে চিত্ররূপ তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তা যেন অনেক বেশি দেখা যায় শান্তিনিকেতনের কাছে এসে। সেখানে সে কবির বর্ণনায় ‘প্রতিবেশিনী কোপাই নদী’। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘রাস্তা যেখানে থেমেছে তীরে এসে/ সেখানে ও পথিককে দেয় পথ ছেড়ে/ কলকল স্ফটিকস্বচ্ছ স্রোতের উপর দিয়ে...’।
কিন্তু কোথায় সেই স্ফটিক জল? বছরের বেশির ভাগ সময়ে পায়ের পাতা ডোবে না কোপাইয়ে। নদীটি এখন মজে যাওয়ার পথে। যথেচ্ছ কংক্রিটের নির্মাণ আর ইটভাটার দাপটে হারিয়ে গিয়েছে নদীর তীরবর্তী পরিবেশ। খোয়াইয়ের তো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই ভার। এই দু’টিই যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নদীবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পরিবেশবিদেরা। তাঁরা মনে করছেন, এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে কোপাই আর খোয়াই মানচিত্র থেকেই মুছে যেতে পারে। কিন্তু, খোয়াই-কোপাইকে বাঁচাতে কবে প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
No comments:
Post a Comment