জানেন কী কীভাবে বিদ্যাসাগরের 'বর্ণপরিচয়' বাংলা ভাষাশিক্ষার প্রধান বই হল? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 22 February 2024

জানেন কী কীভাবে বিদ্যাসাগরের 'বর্ণপরিচয়' বাংলা ভাষাশিক্ষার প্রধান বই হল?


জানেন কী কীভাবে বিদ্যাসাগরের 'বর্ণপরিচয়' বাংলা ভাষাশিক্ষার প্রধান বই হল? 



কলকাতা, ২২ ফেব্রুয়ারি: পালকিতে বসে বসেই বর্ণপরিচয় লিখে ফেলেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। হ্যাঁ এই সেই বই যা আজও ভারত, বাংলাদেশ নির্বিশেষে আমাদের বাংলা ভাষার বর্ণমালাকে চিনতে শেখায়। সেই বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ বিদ্যাসাগর মহাশয় লিখেছিলেন পালকিতে বসে, এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে যাওয়ার পথে। 


অ, আ, ই, ঈ থেকে ক ,খ, গ, ঘ- বর্ণপরিচয় না থাকলে আমরা বাংলা ভাষা সহজে শিখতাম কি করে? তাই ১৬৯ বছর আগে লেখা এই শিশুপাঠ্যটি আজও বাংলা বইয়ের জগতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় প্রথমে থাকে। এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক বর্ণপরিচয় সৃষ্টি হওয়ার এক অজানা ইতিহাস, যা জানার পর রীতিমত চমকে যাবেন। 


সে আজ থেকে ২০০-২৫০ বছর আগের কথা। সেই সময় কেউ পড়ত পাঠশালায়, কেউ বা পড়ত টোলে। বইপত্র তেমন নেই, তাই মুখে মুখেই পড়াশোনা হতো। এরপর ইংরেজরা পা রাখল আমাদের দেশে। বাংলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভাষা শিক্ষার অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠল তাদের। আলোচনা সভা বসল ব্রিটেনের মন্ত্রী সভায়। ততদিন রেভারেন্ড সাহেব চুঁচুড়ায় স্কুল খুলেছেন। ৮০০ কাছাকাছি ছাত্ররা এসেছেন পড়তে। স্কুল আছে ছাত্র আছে অথচ তাদের পড়ার মতো বই নেই । তাই গড়ে উঠল ক্যালকাটা বুক সোসাইটি। লেখা হলো "শব্দসার" ও "শিশু বোধক "নাম বর্ণমালা শেখার দুটি বই। 


প্রথমদিকে এই দুটি বই থেকে পড়ানো হত। তারপর আসলে নামলেন দু'জন বন্ধু। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং মদন মোহন তর্কালঙ্কার। তাঁরা ভাবলেন ছেলেদের পড়াশোনার জন্য এত বই রয়েছে, মেয়েরা কী তবে পড়াশোনা করবে না! সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াবে না! বেথুন সাহেবের সঙ্গে কথা বলে, কলকাতা শহরের বুকে মেয়েদের জন্য খোলা হলো ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল। এই ফিমেল স্কুলে মেয়েদের সহজে বাংলা বর্ণমালা শেখানোর জন্য মদন মোহন তর্কালঙ্কার লিখে ফেললেন "শিশুশিক্ষা" নামক একটি বই। রাতারাতি তুমুল ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই বইটি। কিন্তু তারপরেই ঘটে একটি অঘটন। মদনমোহন তর্কালঙ্কার এবং বিদ্যাসাগরের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির দরুণ দুই বন্ধুর সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। কলকাতা ছেড়ে মুর্শিদাবাদ চলে যান মদনমোহন তর্কালঙ্কার। তবে তার লেখা শিশুশিক্ষা বইটি ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে।


অনেকেই এটা ধারণা করেন, মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষার জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দেওয়ার জন্যই নাকি বর্ণপরিচয় লিখেছিলেন বিদ্যাসাগর। তবে এ বিষয়ের কোনও সত্যতা নেই। তবে, এই বর্ণপরিচয়ের পান্ডুলিপি কিন্তু লেখা হয়েছিল পালকিতে বসে। তখন বিদ্যাসাগর ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটতো। তাই এক স্কুল থেকে আর স্কুলে যাওয়ার মাঝে সময়টুকুতে বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ লিখে ফেলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত হয় বর্ণ পরিচয় প্রথম ভাগ। আর তারপরের বছর প্রকাশিত হয় বইটির দ্বিতীয় ভাগ। বাংলার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে পরিচয় হয় রাখাল, ভুবন, গোপালদের। ফাঁসির আসামী ভুবনের তার মাসির কান কামড়ে নেওয়া গল্পটা আজও আমাদের মাথায় গেঁথে রয়েছে। 


রাতারাতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা বর্ণপরিচয় তুমুল ভাবে জনপ্রিয় হয়। দু'বছরের মধ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা শিশুশিক্ষার বিক্রিকে ছাপিয়ে যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা মাত্র দু পয়সা দামের বর্ণপরিচয় বইটি। আসলে বিদ্যাসাগর মহাশয় চেয়েছিলেন তাঁর বই যেন হাটে-বাজারে, গরীব, শ্রমিক, মজদুর সবার ঘরে পৌঁছে যায়। তাই সস্তার কাগজে কম দামের কালি ব্যবহার করে ছাপা হতো এই বর্ণপরিচয় বইটি। 


শোনা যায়, সেই সময় নাকি প্রায় আড়াই লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল বর্ণপরিচয় বইটির। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে আড়াই লক্ষ কপি! পরিমাণটা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই? এভাবে কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত বইকে পেছনে ফেলে বাংলা বর্ণমালা শিক্ষার প্রধান বই হয়ে ওঠে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের লেখা বর্ণপরিচয়। আজও প্রতিটা বাঙালি বাড়িতে এই বইটার মাধ্যমে শুরু হয় আমাদের বর্ণমালা চেনার প্রাথমিক অধ্যায়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad