সাবধান! এক ক্লিকেই ন-গ্ন হচ্ছে মহিলাদের ছবি
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: সাবধান! এবারে এক ক্লিকেই নগ্ন করে দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের। কী, চমকে উঠছেন তো? হ্যাঁ আতঙ্কিত হওয়ার মতোই তো ঘটনা। এমন বহু অ্যাপ আমাদের মোবাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছে যার মাধ্যমে মহিলাদের সাধারণ ছবিকেই বদলে ফেলা হচ্ছে নগ্ন ছবিতে। এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এই অ্যাপের মাধ্যমেই ঘটছে এই ধরনের নোংরা কাজ। আর তাতেই বিপদ বাড়ছে মহিলাদের। বিশ্বব্যাপী এ আই এর ব্যবহার বেড়েছে। ভারতেও এ আই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ভালো কাজের বদলে মানুষ এখন খারাপ কাজেই মত্ত বেশি। বলা ভালো তাদের মাধ্যমেই ক্রমশ এ আই এর ভয়ের চেহারা বেরিয়ে আসছে চোখের সামনে। অনেকেই এ আই কে নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। মহিলাদের সাধারণ ছবি এ আই মারফত অশ্লীল ছবিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আর সেইসব এ আই অ্যাপ এর জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? এই নিয়ে আলোচনা অন্তহীন। যতই দিন যাচ্ছে ততই জোড়ালো হচ্ছে এই প্রশ্ন। ভেবে দেখুন তো, যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনায়াসেই নানান সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে, সেই প্রযুক্তিতেই অত্যন্ত খারাপ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার জেরে চরম বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন এর সাইবার সিকিউরিটি ডিরেক্টর ইভা গ্যালপেরিন বলছেন, সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এই নগ্নতা দেখার নেশা স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তারা এমনই ওয়েবসাইট ও অ্যাপের খোঁজ করে সার্চ করছেন গুগলে। ডিপফেক পর্নোগ্রাফি বলে একটি অ্যাপ রয়েছে যেখানে মহিলাদের নগ্ন বা অশ্লীল ছবি তৈরি করা যায়। এই অ্যাপটিরও কদর বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। পাশাপাশি সাইবার অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মহিলাদের অশ্লীল ছবি ও পর্নোগ্রাফি তৈরি করে। অনেক মহিলাই এর ফলে প্রতারিত হয়েছেন। এই ধরনের অ্যাপ সাইবার অপরাধের নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি মানুষের যৌন লালসাও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। পাশের বাড়ির মেয়ে হোক কিংবা পছন্দের অভিনেত্রী, এ আই টুলের মাধ্যমে নগ্ন করে দেখা বা সেই ছবি ভাইরাল করা থামেনি।
ডিপফেকের শিকার হয়েছেন রেশমিকা বন্দনা থেকে শুরু করে আলিয়া ভাট, ক্যাটরিনা কাইফের মতো অভিনেত্রীরাও। এমনকি এর থেকে রেহাই পাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এই ধরনের ছবি ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে আমজনতাকেও। যে বিষয়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল, এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বেশ কিছু ওয়েবসাইটেও নজরদারি চালানো হয়েছে। গ্রাফিকা নামে একটি নেটওয়ার্কিং সংস্থার সমীক্ষা বলছে গত সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে দু কোটিরও বেশি মানুষ সেইসব ওয়েবসাইটগুলোই বেশি খুঁজেছে, যেখানে মহিলাদের নগ্ন করে দেখার বিশেষ প্রযুক্তি রয়েছে। এমন এ আই পরিচালিত অ্যাপও সবচেয়ে বেশি ইন্সটল করা হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এ আই যে কোন কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তার উদাহরণ পাওয়া যায় আশেপাশেই। ডিপফেক তার কেরামতি দেখাতে শুরু করে। শুধু মানুষের নকল করাই নয়, ডিপফেক অ্যাপে যে কোনও মেয়েকেই নিমেষে নগ্ন করে দেখা যায়।
এছাড়াও জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম কে নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছিল সামনে। সমস্যার সৃষ্টি করেছিল ডিপফেক টুল। কোনও ব্যক্তি বা কোম্পানির দ্বারা তৈরি এই টুলটির সাহায্যে যেকোনো ছবি থেকে কাপড় মুছে ফেলে নগ্ন করা যায়। আর এই অ্যাপটির সাহায্যে নাবালিকা মেয়েদের টার্গেট করে হয়রান করা হচ্ছে। এর মধ্যেই লক্ষ লক্ষ ভুয়ো মহিলার ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।
কিন্তু এর হাত থেকে বাঁচার উপায় কি? বা এই ধরনের ভিডিওই বা চেনা যাবে কিকরে? একটি ডিপফেক ভিডিও চেনার সময় আপনাকে মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করতে হবে। ভিডিওটি আদৌ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে নাকি অস্পষ্ট তা লক্ষ্য করতে হবে। যদি মনে হয় কোনরকম অন্য কিছু ব্যাপার, তাহলে বুঝবেন এটি ফেক ভিডিও। ভিডিওতে আপনার চোখের পলক লক্ষ্য করা উচিত। যদি ভিডিওতে চোখকে ঝকঝকে না দেখায়, তাহলে মনে করবেন এটি ডিপফেক ভিডিও হতে পারে। এছাড়া ঠোঁটের নড়াচড়া ও কন্ঠস্বরের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
আর আপনিও এর শিকার হলে কোথায় অভিযোগ করবেন ভাবছেন? সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত কোনও ঘটনা আপনার সঙ্গে ঘটলে সময় নষ্ট করবেন না। হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০ তে কল করুন ও অভিযোগ করুন। অথবা cybercrime.gov.in এ ভিজিট করে বাড়িতে বসেই অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করুন। সাবধান থাকুন ও সচেতন থাকুন। চোখ কান খোলা রাখুন। খুব প্রয়োজন না হলে দরকারি অ্যাপ ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ছবি কোথাও শেয়ার করার আগে সচেতন হোন। ভালো থাকুন সাবধানে থাকুন।
No comments:
Post a Comment