হীরে ব্যবহার করতেন পেপার ওয়েট হিসেবে! জানেন কে ভারতের এই সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday 23 February 2024

হীরে ব্যবহার করতেন পেপার ওয়েট হিসেবে! জানেন কে ভারতের এই সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি?


হীরে ব্যবহার করতেন পেপার ওয়েট হিসেবে! জানেন কে ভারতের এই সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি?


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: রতন টাটা, আম্বানি বা বিড়লা নন, ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে জানেন? তিনি এতই ধনী ছিলেন, যার কারণে পেপার ওয়েট নয়, টেবিলের উপর কাগজ চাপা দিতেন হীরে দিয়ে। যার বাড়ির টাকা ইঁদুর খেয়ে ফেললেও সে নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতে হতোনা তাকে। সোনার ইঁট ভর্তি ট্রাক নাকি দাঁড়িয়ে থাকতো তার প্রাসাদের বাগানে। যে মানুষটার টাকার পরিমান, সম্পত্তির পরিমাণ হার মানিয়ে দেবে এখনকার আম্বানি, বিড়লা, রতন টাটাকে। অবাক লাগছে তাই তো!


আমরা অনেকেই চিনি না তাকে। এই মানুষটাই একদিন বিশ্বের ধনী মানুষদের মধ্যে সবার শীর্ষে ছিলেন। আসুন আজ আমরা বরং জেনে নিই, এই দেশের  সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির পরিচয় কি?


দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম করতে বললে অনেকেই টাটা, বিড়লা বা আম্বানিদের কথা বলবেন। কিন্তু তা সত্যি নয়। ফিরে যেতে হবে আজ থেকে ৮০ বছর আগে। তখন অখন্ড ভারত ছিল ধন-সম্পদে ভরা। ঠিক সেই সময় এই ভারতবর্ষের মাটিতে একজন ছিলেন যিনি ধন-সম্পদে পেছনে ফেলে দেবেন এখনকার বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের। সেই মানুষটির নাম ছিল মীর ওসমান আলী খান। তিনি ছিলেন হায়দ্রাবাদের নিজাম। ১৯১১ থেকে ১৯৪৮ সাল অর্থাৎ ৩৭ বছর রাজত্ব চালিয়েছিলেন তিনি। মির ওসমান আলী খান ছিলেন হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম। ১৯৪৮ সালে এই রাজ্য ভারতের হাতে আসে। ১৯১১ সালে নিজাম পদে বসে প্রায় চার দশক তিনি শাসন করেছেন। সম্প্রতি একটি রিপোর্ট বলছে মীর ওসমান আলীর সম্পত্তি বর্তমান সময়ে ধরলে হতো প্রায় ১৭. ৪৭ লাখ কোটি। ডলারের হিসেবে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ আসলে বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে ধনী ব্যক্তি এলন মাস্কের সম্পত্তির কাছাকাছি। বর্তমানে ধনকুবের এলন মাস্কের সম্পত্তির পরিমাণ ২৫০ বিলিয়ন ডলার। বলা হয় নিজামের সম্পত্তির পরিমাণ এতই ছিল, যে হীরেকে পাথর হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন। এছাড়া নিজস্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন নিজাম মীর ওসমান আলী খান। ব্যাংকের নাম হয় হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংক। কাউকে কিছু উপহার দেবার সময়ও দিল দরিয়া ছিলেন নিজাম। শোনা যায় ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথকে বিয়ের সময় হীরের হার উপহার দিয়েছিলেন তিনি। কোহিনুর থেকেও আকারে বড় হীরেকে স্রেফ পেপার ওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন হায়দ্রাবাদের এই নিজাম। স্বাধীনতার সময় অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে হায়দ্রাবাদের নিজাম নবাব মীর ওসমান আলী খানকে শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৮৮৬ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণকারী মীর ওসমান আলী খান তার পিতার মৃত্যুর পর ১৯১১ সালে হায়দ্রাবাদের সিংহাসনে বসেন। ৭৭ বছর আগে নিজামের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে সতের লক্ষ কোটি টাকা। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডমিনিক লাপিয়ের ও ল্যারি কলিন্স তাদের বিখ্যাত বই 'ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট' এ লিখেছেন হায়দ্রাবাদের নিজামের স্বাধীনতার সময় ২ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি নগদ টাকা ছিল। নিজামের প্রাসাদে খবরের কাগজে বান্ডিলে বান্ডিলে নোট মুড়ে থরে থরে রাখা হতো। বিখ্যাত 'টাইম' ম্যাগাজিন ১৯৩৭ সালে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় নিজামকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। লক্ষ লক্ষ টাকায় ধুলো জমতো নিজামের প্রাসাদে। প্রতিবছর ইঁদুর কয়েক হাজার পাউন্ডের নোট খেয়ে ফেলতো। যার কোনও হিসেব ছিল না। নিজামের প্রাসাদে তার টেবিলের ড্রয়ারে রাখা ছিল বিখ্যাত 'জ্যাকব' হীরা। এই মূল্যবান হীরেটি একটি লেবুর সমান ছিল। এবং এটি ২৮০ ক্যারেটের ছিল। নিজাম এটিকে পেপার ওয়েট হিসেবেই ব্যবহার করতেন। শোনা যায় নিজামের বাগানে সোনার ইঁট বোঝাই ট্রাক থাকতো। প্রাসাদে হীরে এবং রত্ন রাখার জন্য কোনও জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। নীলকান্তমণি, পোখরাজ, হিরে, মুক্তো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। এমনই বহাল তবিয়তে জীবন কাটতো নিজাম মীর ওসমান আলী খানের। অথচ এই মানুষটির নাম অনেকেই শোনেননি। টাটা আম্বানি বা বিড়লা নন, দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে নিজাম মীর ওসমান আলী খানের নাম সবার শীর্ষে রয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad