বিখ্যাত রাবড়ি গ্রাম! জানেন কোথায় আছে? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 20 February 2024

বিখ্যাত রাবড়ি গ্রাম! জানেন কোথায় আছে?


বিখ্যাত রাবড়ি গ্রাম! জানেন কোথায় আছে? 


প্রদীপ ভট্টাচার্য ২০শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা : জানেন আমাদের বাংলার বুকেই রয়েছে এমন এক গ্রাম, যে গ্রামের ঘরে ঘরে রোজ ৯০ লিটার দুধে ৩০ থেকে ৩৫ কিলো রাবড়ি বানানো হয়। কথাটা একদমই সত্যি। আমাদের বাংলার বুকেই রয়েছে আস্ত একটা রাবড়ি গ্রাম। আপনিও কি আমার মত রাবড়ি খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আজকের এই লেখাটা আপনাকে পড়তেই হবে।


হুগলির চন্ডীতলা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম আঁইয়া। যে গ্রামের প্রতিটি ঘরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লিটার লিটার দুধ বসানো থাকে জ্বালে। সূর্য উঠবার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রামের সকলে উঠে পড়েন। ভোর ভোর জ্বলে ওঠে গ্রামের প্রতিটি ঘরের চুলা। বিশাল বিশাল কড়ায় ঢালা হয় খাঁটি গরুর দুধ। তারপর সেই দুধকে নিভু নিবু আঁচে সারাদিন ফোটানো হয়। এরপর দুধ ফুটে ঘন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তাতে হাওয়া দেওয়া। হাওয়া পেলেই দুধের মধ্যে পড়তে শুরু করে মোটা আকারের সর। সেই সর জমা মাত্রই লোহার একটা কাঠি দিয়ে তাকে তুলে দেওয়া হয় কড়াইয়ের উঁচু গায়ে। তারপর ওই মোটা সর কেটে কেটে গরম কড়াইয়ের গায়ে রাখা হয়। এদিকে ক্রমাগত আঁচ পেঁয়ে পেয়ে কড়াইয়ের বাকি দুধ জল মরে গিয়ে আরো ঘন হয়ে ওঠে। তৈরি হয় মালাই। এরপর গরম মালাইয়ে দেওয়া হয় টাটকা খেজুর গুড় বা চিনি। তারপর ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিয়ে সরগুলো মিষ্টি মালাইয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। আর সেগুলোকেই হাড়িতে জমিয়ে তৈরি করা হয় রাবড়ি। তারপর রাবড়ি গ্রাম থেকে রাবড়ি চলে যায় গোটা বাংলার অলিতে গলিতে। এখন রাবড়ির কথা শুনে আপনারও জিভে জল চলে এলো তো!


মিষ্টির সঙ্গে বাঙালির টান জন্ম জন্মান্তরের। বাংলার অলিতে গলিতে মিশে রয়েছে মিষ্টির কড়া পাকের গন্ধ। প্রথম আলাপেই হোক কিংবা শেষ পাতে, বাঙালি মিষ্টি ছাড়া অচল। বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টি রাবড়ির স্বাদে আপ্লুত হননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর ঠিক এই কারণেই বাংলার একটা আস্ত গ্রামের নাম আজ বদলে গিয়ে হয়েছে রাবড়ি গ্রাম। হুগলির এই আঁইয়া গ্রামে ১০০ টিরও বেশি পরিবার রাবড়ি বানানোর সঙ্গে যুক্ত। এবং এরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই একই কাজ করে চলেছেন। আঁইয়া গ্রামে রাবড়ি তৈরির জন্য এই গ্রামের বাড়িগুলোতে পাশের গ্রাম লক্ষণপুর থেকে প্রতিদিন লিটার লিটার খাঁটি গরুর দুধ আসে। একটা সময় ছিল যখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কিলো দরে রাবড়ি বিক্রি করতেন এই গ্রামের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাবড়ির চাহিদা এখন আগের থেকে অনেকটা বেশি। সেই কারণে রাবড়ির দাম গিয়ে ঠেকেছে কেজিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আবার উৎসবের মরসুম বা বড় কোনও অনুষ্ঠানের বরাত পেলে তখন দামটা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ কিভাবে সামলান তারা? রাবড়ির কারিগররা বলেন, প্রতিটি জিনিসেরই নির্দিষ্ট একটি মাপ রয়েছে, কড়াইতে যে দুধ জ্বাল দেয়া হয় তারও একটা নির্দিষ্ট মাপ আছে। একটা কড়ায় সাত লিটার দুধকে ফুটিয়ে দেড় থেকে দু লিটার দুধে নামিয়ে আনা হয়। এরপর দায়িত্বে থাকেন বাড়ির মহিলারা। বাড়ির সকলে মিলে মিশে রাবড়ি বানিয়ে চলেছেন তারা। শীতের মরসুমে চিনির রাবড়ির পাশাপাশি তৈরি করা হয় নলেন গুড়ের রাবড়ি। 


শীতের সময় আপনি যদি আঁইয়া গ্রামে বেড়াতে যান, তাহলে গ্রামে ঢুকলেই পাবেন নলেন গুড়ের রাবড়ির সুগন্ধ। এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা, যারা এই গ্রামের এইসব বাড়ি থেকেই দশ, পনের কিলো রাবড়ি কিনে আনেন। তারপর অবশিষ্ট রাবড়ি চলে যায় বরাত থাকা দোকানে। হাওড়া, বালি, বেলুড় সহ বাংলার নানা জায়গায় কিন্তু এই রাবড়ি গ্রাম থেকেই রাবড়ি যায়। কলকাতার বেশিরভাগ নামিদামি দোকানেও যে রাবড়ি পাওয়া যায় তার নেপথ্যেও রয়েছে এই একটাই গ্রাম। যে গ্রামের মানুষ গুলো দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে চলেছেন আমাদের রসনার তৃপ্তির জন্য। বলাই বাহুল্য এই রাবড়ি গ্রামই কিন্তু আমাদের বিখ্যাত রাবড়িকে বাঁচিয়ে রেখেছে। শিবরাম চক্রবর্তীর ভাষায়, 'পকেটে পয়সা থাকলেই রাবড়ি খাবেন'। এ কথা যদি আপনিও সত্যি করতে চান তাহলে নিজের চোখে রাবড়ি প্রস্তুত করা দেখতে অবশ্যই ঘুরে আসুন এই রাবড়ি গ্রামে। আর তার সঙ্গে গরম গরম রাবড়ি চেখে দেখে আসতেও ভুলবেন না কিন্তু। সকলে ভালো থাকুন মিষ্টিমুখে থাকুন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad