দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন পঙ্গু প্রেমিকাকে! ইন্ডিয়ান আর্মির এই মেজর সারা দেশের গর্ব - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday 24 February 2024

দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন পঙ্গু প্রেমিকাকে! ইন্ডিয়ান আর্মির এই মেজর সারা দেশের গর্ব


 দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন পঙ্গু প্রেমিকাকে! ইন্ডিয়ান আর্মির এই মেজর সারা দেশের গর্ব




কলকাতা: দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান আর্মি এই মেজার। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন একজন প্রতিবন্ধী মেয়েকে। আজও ইন্ডিয়ান আর্মির সবচেয়ে রোমান্টিক জওয়ান হিসেবে শহীদ মেজর শশীধরনের নামই উঠে আসে। মৃত্যুর আগের দিন অবধি নিজের প্রতিবন্ধী স্ত্রীয়ের হাত ছাড়েননি তিনি। আবার দেশের জন্য বুক চিতিয়ে লড়াইও করেছেন। আজ এই প্রতিবেদন এমনই একজন মানুষকে নিয়ে, যাঁর জীবন কাহিনী কোনও বলিউড মুভির চেয়ে কম নয়।


মেজর শশীধরন নায়ারের জন্ম ১৯৮৫ সালে কেরালায়। তবে কেরালায় জন্মালেও শশীধরন বড় হয়েছিলেন পুনেতে। মাত্র ২২ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান আর্মির গোর্খা রাইফেল রেজিমেন্টে চাকরি পান শশীধরন।

সালটা ২০১২, সেই সময় মাত্র ২৭ বছর বয়সেই ইন্ডিয়ান আর্মির ক্যাপ্টেন হয়ে গিয়েছেন শশীধরন। এক বন্ধু জন্মদিনের পার্টিতেই শশীধরনের সঙ্গে আলাপ হয় ত্রুপ্তির। সে সময় ত্রুপ্তি নায়ার একদম সুস্থ ছিলেন। আলাপ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রেম এবং তারপর এনগেজমেন্ট। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু ত্রুপ্তির শরীরে দানা বাঁধে মাল্টিপল আর্টারিওক্লেরোসিস নামক এক দুরারোগ্য অসুখ। কিছুদিনের মধ্যেই শরীরে নিচের অংশ আজীবনের মত প্যারালাইসড হয়ে যায় শশীধরনের প্রেমিকা ত্রুপ্তির। হুইল চেয়ারে আটকে যায় ত্রুপ্তির জীবন।


সেই সময় সবাই শশীধরনকে সম্পর্কটা থেকে পিছিয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন শশীধরন ছিলেন এক কথার মানুষ। তিনি ত্রুপ্তিকে কথা দিয়েছিলেন আজীবন একসাথে থাকার। তাই প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে ভালোবেসে স্ত্রীর সম্মান দেন ক্যাপ্টেন শশীধরন। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একদিনও ত্রুপ্তিকে তাঁর প্রতিবন্ধীকতা বুঝতে দেননি শশীধরন। নিজের সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে লং ড্রাইভ, একজন আদর্শ প্রেমিকের মত ভালোবাসতে তিনি তাঁর নিজের স্ত্রীকে।


কিন্তু তারপরেই আসে সেই অভিশপ্ত ২০১৯ সাল। শশীধরন ততদিনে মেজর হয়ে গিয়েছেন। পোস্টিং পেয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরে। ১১ই জানুয়ারি টেররিস্টদের আইইডি ব্লাস্টে ভীষণভাবে আহত হন ইন্ডিয়ান আর্মির দুই জওয়ান। সাথে সাথে মেজর শশীধরন বাদবাকি সেনাদের সাথে নিয়ে একটা সার্চ অপারেশন শুরু করে দেন। কিন্তু টেররিস্টদের পাতা ল্যান্ডমাইলে পা পড়ে যায় মেজর শশীধরনের। আসলে যেহেতু তিনি সিনিয়র তাই তিনি সবার আগে এগিয়েছিলেন। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মেজর শশীধরন। 


কিন্তু তারপর সমস্ত রকম চেষ্টা করার পরেও প্রাণে বাঁচানো যায় না শশীধরনকে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে দেশের জন্য শহীদ হতে হয়, মেজর জেনারেল শশীধরণ নায়ারকে। মৃত্যুর আগের দিনও নিজের স্ত্রী ত্রুপ্তিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন শশীধরন নায়ার। ফেরার পথে অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধও কিনেছিলেন। কিন্তু তারপরই সেই ল্যান্ড মাইন্ড ব্লাস্ট চিরজীবনের মতো শশীধরন নায়ারকে আলাদা করে দিল তার ভালোবাসার ত্রুপ্তির থেকে।


মেজর শশীধরনের জাতীয় পতাকায় মোড়া নিথর দেহকে যেদিন গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানানো হচ্ছিল সেদিন হুইল চেয়ারে বসে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন ত্রুপ্তি। আকাশ-বাতাস তখন গর্জে উঠল ইন্ডিয়ান আর্মি চিৎকারে। "ভারতের বীর মেজর শশীধরন অমর রহে"। 


শশীধরন নায়ার নেই আজ পাঁচ বছর হল। এখনও ইন্ডিয়ান আর্মির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় মেজর শশীধরনের সাহসিকতার এবং ভালোবাসার সমস্ত গল্প। ৩৭ বছর বয়সের ত্রুপ্তি নায়ার পুনে শহরে আজ একাই থাকেন। তবে ত্রুপ্তি বিশ্বাস করেন তার শশী সব সময় তাঁর সঙ্গে ছায়ার মত রয়েছেন, কোথাও যায়নি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad