কোচবিহার ভারতের অংশ ছিল না স্বাধীনতার দুই বছর পরও!
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২১ ফেব্রুয়ারি: কোচবিহার- রামায়ণ এবং মহাভারতে উল্লেখ ছিল পশ্চিমবঙ্গের এই জেলার। অথচ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পরেও ভারতবর্ষের অংশ ছিল না এই কোচবিহার জেলা। তখনও একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল আমাদের কোচবিহার। আজও কোচবিহারের মানুষদের কাছে ২৮ শে আগস্ট তারিখটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। কিন্তু কেন? চলুন উত্তরবঙ্গের রাজকীয় জেলা কোচবিহারের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা সবটা জেনে নেই এই প্রতিবেদনে।
কোচবিহারের একদম শুরুর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে আসামের ইতিহাস। সেই সময় এই অঞ্চল পরিচিত ছিল প্রাগজ্যোতিশা নামে, যার উল্লেখ রামায়ণ-মহাভারতেও পাওয়া যায়। এই প্রাগজ্যোতিশার পশ্চিমাঞ্চল ছিল কামরূপ। ১৪৯৮ তে মুসলিম সেনা বাহিনী কামরূপ আক্রমণ করে। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করে এখানে উত্থান হয় কোচ রাজার। কোচ রাজা বিশ্বসিংহের নাম থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয় কোচবিহার অর্থাৎ রাজার ভ্রমণ তীর্থ। এই কোচ রাজবংশের একজন রাজা ছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ।
আধুনিক কোচবিহারের আসল স্থপতি ছিলেন এই নৃপেন্দ্র নারায়ণ। ওঁর আমলেই ১৮৮৭ সালে কোচবিহারের বুকে গড়ে ওঠে বিখ্যাত কোচবিহার রাজবাড়ি, যার সৌন্দর্যে আজও মুগ্ধ হয়ে যান পর্যটকরা। এই কোচবিহার রাজবাড়িটি আদতে ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে তৈরি। ৪০ টি কক্ষ বিশিষ্ট এই রাজবাড়ির আয়তন প্রায় ৫১ হাজার ৩০৯ বর্গফুট। কোচবিহার বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র দু মিনিট হাঁটলেই এই রাজবাড়ির সদর দরজায় পৌঁছে যাবেন আপনারা। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমলে ১৮৮৭-৮৯-এর মধ্যে কোচবিহারের বুকে তৈরি হয় সেই সময়কার সবচেয়ে বড় মদনমোহন মন্দির। বৈরাগী দীঘির উল্টো দিকে অবস্থিত এই শ্বেতশুভ্র মদনমোহন মন্দির দেখলে আজও আপনাদের চোখ জুড়িয়ে যাবে।
জায়গার কোথায় পড়ে আসছি আগে বলি কিভাবে ভারত বর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গের অংশ হল এই কোচবিহার। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট যখন ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় তখনও কোচবিহার ছিল একটা স্বাধীন রাজ্য, যার রাজা ছিলেন জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর। কিন্তু ভারত স্বাধীন হওয়ার দু'বছর পর ১৯৪৯ সালে ২৮ আগস্ট তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে মহারাজার একটা চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতবর্ষের একটি অংশ হয়ে ওঠে স্বাধীন রাজ্য কোচবিহার।
আর তারপর ১৯৫০ সালের ১ লা জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলা হিসেবে পরিচিত পায় রাজকীয় কোচবিহার। তাই আজও ২৮ আগস্ট তারিখটিকে "ভারত অন্তর্ভুক্তি দিবস" হিসেবে পালন করেন কোচবিহারের মানুষ। রীতিমত অনুষ্ঠান হয় গোটা কোচবিহার জুড়ে। তবে, কোচবিহার ঘুরতে এলে এখানকার প্রাচীন স্থাপত্যগুলো দেখতে ভুলবেন না।
কোচবিহার রাজবাড়ি আর মদন মোহন মন্দিরের কথা আগেই বলা হয়েছে। ওই দুটো জায়গা না দেখলে চরম মিস করবেন। কোচবিহার এলে অবশ্যই সাগরদিঘী, বড় দেবীর বাড়ি, ব্রাহ্ম মন্দির, ডাঙ্গারআয় মন্দির দেখতে ভুলবেন না। এছাড়াও কোচবিহারে রয়েছে কিছু জাগ্রত দেবীর মন্দির। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি, কামতেশ্বরি মন্দির। শোনা যায় এই দুই মন্দিরে মানত করলে ভক্তদের সকল মনস্কামনা পূরণ হয়। এছাড়াও সিদ্ধনাথ শিব মন্দির, মধুপুর ধাম, বানেশ্বর শিব মন্দির এবং বিখ্যাত অর্ধনারীশ্বর মন্দির হল কোচবিহার ভ্রমণের মূল আকর্ষণ।
কোচবিহার থেকে খুব কাছে রয়েছে রাজাভাত খাওয়া জঙ্গল এবং জলদাপাড়া অভয়ারণ্য। বঙ্গের এই দুই বিখ্যাত জঙ্গলের উল্লেখ কিন্তু আমরা প্রচুর গল্পে উপন্যাসে আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি। আর তাই এখানে গেলে কিন্তু অবশ্যই এখানকার জঙ্গল সাফারি এবং এলিফ্যান্ট সাফারিটা উপভোগ করতে ভুলবেন না। তাহলে আর দেরি কিসের? উত্তরবঙ্গের রাজকীয় জেলা কোচবিহার ঘুরতে যাওয়ার টিকিটটা আজকেই কেটে ফেলুন, আর মাত্র দু-তিন দিনের ট্রিপেই আবিষ্কার করুন বাংলার বুকে থাকা এই আশ্চর্য জেলাটিকে।
No comments:
Post a Comment