জানেন কী কল্যাণী শহরকে কেন দ্বিতীয় কলকাতা বলা হয়?
কলকাতা, ২২ ফেব্রুয়ারি: নিজের প্রেমিকার নামে একটা আধুনিক শহর গড়ে তুলেছিলেন ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়। আমরা যে শহরকে কল্যাণী নামে চিনি। কী নেই এই কল্যাণী শহরে; চার চারটি রেলস্টেশন থেকে শুরু করে তিনটি মেডিক্যাল কলেজ, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম, শিল্প নগরী, শেষ আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। বিধানচন্দ্র রায়ের প্রেমের কল্যাণী যেন আজও সেই ভালোবাসাকে বহন করে চলেছে।
সেই সাথে এই কল্যাণীতে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি। সেই সময় আমেরিকান বিমান বাহিনী ঘাঁটি ছিল এই আধুনিক শহরে। কল্যাণীর বেশ কিছু জায়গায় এখন রয়েছে সেই নিদর্শন। এত বছর পর আবারও কল্যাণীর আকাশে উড়তে চলেছে বিমান। তবে এবার যুদ্ধবিমান নয়, কল্যাণীতে গড়ে উঠতে পারে বিধানচন্দ্রের স্বপ্নের আধুনিক এয়ারপোর্ট।
পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী তথা মহান ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন ছিল এই কল্যাণীকে নিয়ে। তিনি চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার মতো আরও একটি আধুনিক শহর গড়ে উঠুক। আন্তর্জাতিক মানের এটি বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়ের। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, আধুনিক রাস্তাঘাট থেকে কলকারখানা। কল্যাণীতে কলকাতার মতো সবই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এখনও তৈরি হয়নি সেই বিমানবন্দর। অনুমান করা হচ্ছে এবার বিধানচন্দ্রের সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। কল্যাণীতে গড়ে ওঠা এইমস-এর দৌলতে হয়তো খুবই তাড়াতাড়ি গড়ে উঠতে পারে কল্যাণী বিমানবন্দর। মনে করা হচ্ছে, কল্যাণীতে বিমানবন্দর তৈরি হলে সে ক্ষেত্রে অনেকটাই চাপ কমবে দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।
অন্যদিকে রাজ্যে একাধিক প্রান্ত থেকে এমনকি বাংলাদেশ থেকেও এইমসে চিকিৎসা করাতে আসছেন প্রচুর মানুষ।আর যদি কল্যাণীতে বিমানবন্দর তৈরি হয়, সেক্ষেত্রেও সুবিধা পাবে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ। তবে, যেখানে আধুনিক শহর গড়ে ওঠে, সেখানে যে একটা বিমানবন্দর অবশ্যই প্রয়োজন তা প্রথমেই বলে গিয়েছিলেন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়। কিছু সমস্যার জন্য আজও তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হল না।
তবে, বিধানচন্দ্রের হাতে তৈরি কল্যাণী শহর কিন্তু একই রকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। আপনি এই শহরে আসলে সত্যি মনে হবে দ্বিতীয় কলকাতায় প্রবেশ করেছেন। তিনটি বড় আইল্যান্ড সমস্ত কল্যাণী শহরকে এমন ভাবে জুড়ে রেখেছে, সড়ক ব্যবস্থার সেই উন্নত পরিকাঠামো হয়তো অন্যান্য শহরে দেখতে পাবেন না। বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে তৈরি সেই স্টেডিয়ামে আজও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বড় বড় ফুটবল ম্যাচ হয়। কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন সেই স্টেডিয়ামকে।
শোনা যায়, বিজয় মাল্যে এবং কোম্পানি কিংফিশারের বিয়ার একসময় কল্যাণীতে তৈরি হতো। তবে বর্তমানে কিংফিশার না হলেও আজও সেই ফ্যাক্টরিতে বিয়ার তৈরি হয়। আর যা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বের একাধিক দেশে। এছাড়াও কল্যাণীতে রয়েছে চা বাগান, কফি বাগান সহ একাধিক উদ্যান। যেন মনে হবে সবুজে ঘেরা এক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কলকাতা শহর।
No comments:
Post a Comment