চাকরি না পেয়ে রাস্তায় দোকান দিলেন এম এ, বি এড পাশ করা মেয়ে - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 21 February 2024

চাকরি না পেয়ে রাস্তায় দোকান দিলেন এম এ, বি এড পাশ করা মেয়ে


চাকরি না পেয়ে রাস্তায় দোকান দিলেন এমএ, বিএড পাশ করা মেয়ে! 


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: সংস্কৃতে এমএ এবং বি এড করেও জোটেনি চাকরি তাই রাস্তার উপর সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের দোকান দিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়েছেন মেয়ে। বাড়ির অবস্থা ভালো নয়। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির জন্য বিভিন্ন পরীক্ষায় বসার পরেও নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি যোগাড় করতে পারেননি মধ্যমগ্রামের চামেলী মিস্ত্রি। কিন্তু তবুও হেরে যাননি তিনি। সংসারের মুখের দিকে তাকিয়ে চাকরির প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে সারা সন্ধ্যে জুড়ে ধোসা, ইডলি বানিয়ে বিক্রি করছেন এই কৃতি ছাত্রী। চামেলীর গলায় ব্লুটুথ, হেডফোন নেই। তার দোকানের সামনে ইউটিউবারদের লম্বা লাইনও নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার তাগিদও নেই চামেলীর। তার বদলে ছিমছাম সাদামাটা চামেলীর আছে শুধু একটা স্বপ্ন, চাকরি পেয়ে নিজের বাবা মাকে ভালো রাখা।


আসুন আজ আপনাদের মধ্যমগ্রাম দু নম্বর এলাকার বাসিন্দা চামেলীর জীবন যুদ্ধের গল্পটা জানাই। নিজের বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সে মাথা উঁচু করে লড়াই করে যাচ্ছে হাসিমুখে। 'পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।' ছোটবেলা থেকে আমরা প্রত্যেকেই এই প্রবাদ বাক্যটা শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু আমরা যত বড় হয়েছি ততোই টের পেয়েছি এই প্রবাদ বাক্যটার আসল অর্থ। বড় হয়ে গাড়ি-ঘোড়া চড়তে গেলে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা পয়সা উপার্জন করতে হবে। আর তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পড়াশোনা। তারপর ডিগ্রি এবং একটা চাকরি। কিন্তু সমসাময়িক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পড়াশোনা শিখে ডিগ্রি থাকলেও চাকরি কোথায়? ইদানিং দেখবেন রাস্তায় পা দিলেই বিভিন্ন চায়ের দোকান চোখে পড়ে, যার ব্যানারে লেখা আছে এমএ-বিএড চায়ওয়ালা, শিক্ষিত বেকারের ক্যাফে, কিংবা এমবিএ চায়ওয়ালা। আপনাদের হয়তো মনে হতেই পারে আজকাল দোকানের এরকম নাম কেনো? আসলে দোকানের এরকম নাম দেওয়ার পেছনে লুকিয়ে আছে শতশত কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রনা। 


ছোটবেলা থেকেই অর্থ কষ্ট দেখে বড় হয়েছেন চামেলী। চামেলীর বাবা গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন। তাই চামেলী বরাবরই চেয়েছেন চাকরি করে বাবার পাশে দাঁড়াবেন। বাবাকে সারাদিনের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গাড়ি চালাতে দেখে কষ্ট হতো মেয়ের। তাই শত অভাবের মধ্যেও মন দিয়ে পড়াশোনা করে গেছেন চামেলী। পড়াশোনা শেষ করে বহু সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেও বসেছেন তিনি। কিন্তু মনের মত ফল পাননি। এদিকে সংসারের অবস্থাও ভালো নয়। কতদিন আর বসে থাকা যায়। তাই নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মধ্যমগ্রাম সোদপুর রোডের ধারে একটি ফুডকার্ট করে সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার নিয়ে বসতে শুরু করেন চামেলী। ফুডকার্টটির নাম দেন 'সাউথ জাইকা'। চামেলীর বাবা রাজুমিস্ত্রিও মেয়ের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে খাবারের  কাজ করতে শুরু করেন। চামেলীর এই দোকানে দোসা, ইডলি, উত্তাপমের মত বিভিন্ন সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের পাশাপাশি ম্যাগিও পাওয়া যায়। তাই সন্ধ্যা হলেই এই দোকানের ভিড় জমান ৮ থেকে ৮০ সকলেই। বিকেল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে দোকানের সমস্ত খাবার নিজের হাতে বানান চামেলী। সারা সন্ধ্যে দোকান সামলে রাতে বাড়ি ফিরে  তারপর পড়াশোনা করেন। 'সাউথ জাইকা'তে আসা সমস্ত মানুষের সঙ্গেই খুব সুন্দর ব্যবহার করেন চামেলী। আর এই ভাবেই চামেলীর হাসিতে ঢাকা পড়ে যায় তার রোজকার লড়াইয়ের গল্পটা। আপনি চামেলীকে দেখে বুঝতেও পারবেন না নিচের পরিবারের জন্য কতটা খাটছে এই মেয়েটা। আর তাই এই কৃতি ছাত্রীর খাবারের প্রশংসা মধ্যমগ্রামের সকলের মুখেমুখে। কিন্তু চামেলি আক্ষেপের সুরে বলেন, চাকরির বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তবুও কোনোদিন যদি চাকরি পান তাহলেও এই দোকান বন্ধ হতে দেবেন না। তিনি তার বাবার দায়িত্বে দোকান রেখে অফিসে যাবেন। 


আসলে আমরা অনেকেই ভাবি ধরাবাঁধা দশটা পাঁচটার কোনও কাজ করতে না পারলেই আমাদের জীবন বৃথা। আমাদের কোনও সম্মান নেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মাথা উঁচু করে সৎ পথে করা যে কোনও কাজই অনেক সম্মানের। আর সেটাই করে দেখাচ্ছেন চামেলীর মতো সাহসী, কৃতি ছাত্র-ছাত্রীরা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad