কোন কারণে বখতিয়ার খিলজির ৯০ লক্ষ পাণ্ডুলিপি পোড়ানোর ইতিহাস পড়ানো হয় না ?
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২১ ফেব্রুয়ারি: সেদিন যদি লুটেরা বখতিয়ার খিলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ না করতো তাহলে হয়তো আজ গোটা বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই পাল্টে যেত। পন্ডিতদের লেখা হাজার বছর পুরানো পান্ডুলিপিতে যেসব ওষুধের বর্ণনা ছিল তাতে গাছ গাছালির গন্ধেই সেরে উঠত কঠিন কঠিন রোগ। এক সময় এমনই এক কঠিন রোগে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল বখতিয়ার খিলজি। ১১৯৩ সাল অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৮০০ বছর পুরানো ভারতের এক ধ্বংসাত্মক ইতিহাসের কাহিনী নিয়ে এই প্রতিবেদন।
সেদিন নালন্দা মহাবীরের পন্ডিত রাহুল শ্রী বদ্রির দেওয়া ওষুধের গন্ধে সেরে উঠেছিল বখতিয়ারের সেই কঠিন রোগ। কিন্তু তার উপহারের দস্যুবৃত্তি আর গোটা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্বালিয়ে দিল। পন্ডিতদের সেই ক্ষমতা সহ্য করতে পারেনি খিলজি। নালন্দার সাগর, রত্ন দধি ও রত্ন রঞ্জক নামে মোট তিনটি গ্রন্থাগার ছিল। সেখানে প্রায় ৯০ লক্ষ্য পান্ডুলিপিতে লেখা ছিল একাধিক ফর্মুলা,যে জিনিস আবিষ্কার করতে আমাদের বছরের পর বছর লেগে গিয়েছে হয়তো নালন্দার সেই পাণ্ডুলিপিতে খুব সহজেই তা বর্ণনা করা ছিল।
সেদিন খিলজি খুব মারাত্মক এক আক্রমণ করেছিল এই নালন্দার ওপর। আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল নালন্দার তিনটি গ্রন্থাগারে। নির্মমভাবে অত্যাচার চলেছিল দেশ-বিদেশ থেকে পড়তে আসা মোট দশ হাজার ছাত্রের ওপর। আর এটাই ছিল ইতিহাসের সব থেকে বড় ক্ষতি।
মনে করা হয়, একাধিক কঠিন রোগ নিরাময়ের উপায় বলা ছিল পন্ডিত রাহুল শ্রী বদ্রির লেখা পান্ডুলিপিতে। অনুমান করা হয়, ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ নিরাময়েরঝ ওষুধ লেখা ছিল সেই পান্ডুলিপিতে। এবার একবার ভেবে দেখুন সামান্য একটা হিংসার কারণেই আমরা আজ কত কিছু হারিয়েছি। আজ নালন্দা থাকলে হয়তো গোটা বিশ্ব নির্ভর করত ভারতের ওপর।
আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীর প্রথম ইউনিভার্সিটি ছিল নালন্দা। সেই সময় বিহারের এই এলাকা ছিল আমগাছের জঙ্গলে ঘেরা। ইতিহাস ঘেঁটে যতদূর জানা যায়, মহর্ষি গৌতম বুদ্ধের পদধূলি পড়েছিল এই স্থানে। এখানেই মোট ৩০ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। আজও বিহারের এই স্থানে নালন্দার নিদর্শন বলে দিচ্ছে সেই আমলে কতটা উন্নত ছিল শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রায় ৯০ লক্ষ বইয়ের উল্লেখ ছিল এই নালন্দা লাইব্রেরিগুলিতে। একবার ভেবে দেখুন তো কতটা জ্ঞান ছিল সেই বইয়ের পাতায়। কিন্তু বখতিয়ার খিলজি শুধুমাত্র সেদিন হিংসার কারণেই ধ্বংস করে দিয়েছিল এই নালন্দাকে।
অনেকে বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে পুড়েছিল সেই সব পান্ডুলিপিগুলো। ভেবে দেখুন কত পুঁথি ছিল সেখানে! সাথে এটাও ভাবুন আজ যদি সেই পুথিগুলো থাকতো, তাহলে কতটা কঠিন রোগ নিরাময় খুব সহজেই হয়ে যেত। হয়তো আর কাটা-ছেঁড়া করে অপারেশন করতে হতো না।
এক ইতিহাস দেখিয়েছে, আমাদের এই নালন্দাকে ধ্বংস হতে। তার আট যুগ পর ভারতের বুকে জন্ম নিল এক জ্ঞানের অবতার, তিনি হলেন মহান এপিজে আবদুল কালাম। তাঁর উদ্যোগে ২০০৬ সালে ফের চালু করা হল নালন্দা ইউনিভার্সিটি। তবে অভাব থেকে গেল সেই সমস্ত পুরান পুঁথি পান্ডুলিপির।
No comments:
Post a Comment