পোস্ট পোলিও সিন্ড্রোমে আক্রান্ত! মনের জোরে এক চান্সেই সিএ পাস - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 21 February 2024

পোস্ট পোলিও সিন্ড্রোমে আক্রান্ত! মনের জোরে এক চান্সেই সিএ পাস


পোস্ট পোলিও সিন্ড্রোমে আক্রান্ত! মনের জোরে এক চান্সেই সিএ পাস 


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ২১শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: মাত্র দু মাস বয়স থেকে শরীরে পোলিও। কিন্তু তাতে কি? মনের জোর নিয়ে সিএ'র মত চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষায় একচান্সে পাশ করে তিনি আজ সফল একজন চার্টার্ড একাউনটেন্ট।  শিল্পা মেহতা জৈন। লড়াইয়ের আর এক নাম। ছোটবেলা থেকেই শিল্পা দেবীর শরীরের নিম্নাঙ্গ ৯৪ শতাংশ পোস্ট পোলিও সিনড্রোমে আক্রান্ত। তাই নিয়েই লড়াই করে পেয়েছেন অসাধারণ পারফরমেন্স। প্রফেশনালিজমের জন্য পেয়েছেন আই সি এ আই অ্যাওয়ার্ড। অথচ একদিন এই শিল্পা দেবীকেই সকলে করুণার চোখে দেখতো। কারণ তিনি প্রতিবন্ধী। শিল্পা দেবীর বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন বলে, প্রতিবেশীরা বলেছিলেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে স্কুলে পড়িয়ে বেকার টাকা পয়সা নষ্ট করে কি লাভ? আর আজ সেই মেয়েটাই দেখিয়ে দিল মনের জোরের থেকে শারীরিক অক্ষমতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসুন আজ আপনাদের মুম্বাইয়ের ৪৩ বছরের শিল্পা মেহতা জৈনের জীবন যুদ্ধের গল্পটা বলি।


আচ্ছা কজন মানুষকে শুনেছেন বলুন তো সিএ'র মত কঠিন পরীক্ষা এক চান্সে পাস করতে পেরেছে? যে পরীক্ষা মানুষ দিনরাত এক করে পড়াশোনা করে চার-পাঁচবার বসেও পাস করতে পারে না। সেই কঠিন পরীক্ষা এক্সচান্সে পাস করে শিল্পাদেবী হয়ে উঠলেন একজন সিএ। আসুন  আজ সেই গল্পই বলবো আপনাদের।


পারিবারিকভাবে রাজস্থানের সানচোরের বাসিন্দা হলেও মুম্বাইতেই বড় হয়েছেন শিল্পা দেবী। স্কুলে  পড়াকালীন তার কোনও বন্ধু ছিল না। যে বয়সে আর পাঁচটা বাচ্চা বন্ধুদের সঙ্গে হেসে খেলে বেড়ায়, সেই বয়স থেকেই শিল্পা দেবী একা।  আর এইভাবেই দিনের পর দিন অবহেলিত হতে হতে শিল্পা দেবী বুঝতে পারেন তাকে জীবনে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। আর তাহলেই আজ যারা তাকে অবহেলা করছে একদিন তারাই তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে। শিল্পা দেবীর জীবনের এই লড়াইয়ে পোলিও তার পা চেপে ধরলেও তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জেদ নিয়ে মাধ্যমিক ও ঊচ্চমাধ্যমিকে তুখোর রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। তারপর ২০০১ সালে কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট এর পরীক্ষায় তিনটি ধাপই তিনি এক চান্সে পাশ করে যান। তারপর এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। একে একে করেছেন এম কম এবং এমবিএ। কিন্তু শিল্পা দেবী এক চান্সে সিএ পাস করতে পারলেও আর্টিকেলশিপের জন্য বিভিন্ন নামিদামী একাডেমিতে এডমিশনের জন্য গেলে বহু সংস্থা থেকেই তাকে মুখের ওপর না বলে দেয়। তারপর কষ্ট করে সোর্স মারফত একটি জায়গায় আর্টিকেলশিপের  সুযোগ পান শিল্পা দেবী। সেই হলো শুরু। এরপর আর থেমে থাকেননি শিল্পা দেবী। শুনলে অবাক হবেন ড্রাইভিং, সুইমিং, রাইডিং, ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, কুকিং সবকিছুই কারও সাহায্য ছাড়াই করতে পারেন তিনি।


শিল্পা দেবীকে দেখে একটা সময় যারা বলতেন, তার কোনদিনও বিয়ে হবে না, আর হলেও বিয়ের জন্য অনেক টাকা যৌতুক দিতে হবে তাকে, আজ সেই শিল্পা দেবীই বিবাহিত জীবনে খুব সুখী। তবে যৌতুক দিয়ে নয়, ভালবেসে বিয়ে করেছেন তিনি। তার স্বামী দিলীপ জৈনের কাছে শিল্পা দেবীর শারীরিক অক্ষমতা থেকেও শিল্পা দেবী মানুষটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরের শুরুতেই শিল্পা দেবী তার অসামান্য কাজের জন্য 16th Institute of Chartered Accounts of India থেকে ICAICA অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তাই শিল্পা দেবী ঠিক করেছেন, তার মত প্রতিবন্ধী মানুষদের তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবেন। আর এই পুরস্কার পাওয়ার পরদিনই শিল্পা দেবী তার বাবার নামে শান্তিলাল মেহতা স্কলারশিপ ঘোষণা করেন। যেখান থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে ১০০ জন প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের, যারা তার মত সি এ হতে চান। ইতিমধ্যে রাজস্থানের আলওয়ার থেকে তিনজন দুস্থ দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে এই স্কলারশিপ দেওয়ার কথা ভেবেছেন শিল্পা দেবী। শিল্পা দেবী দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোরে কতদূর এগোনো যায়। ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad