ফের আগুন ভাংচুর, সন্দেশখালিতে ব্যর্থ হল পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা: সন্দেশখালিতে ব্যর্থ হল পুলিশ প্রশাসনের যাবতীয় উদ্যোগ। ক্ষোভের আগুন ছড়াতে পারে তা আঁচ করতে পেরে গত বুধবার বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। বসানো হয়েছে অভিযোগ নেওয়ার ক্যাম্প। ডিজি, এডিজি দক্ষিণ বঙ্গ এবং ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ পদমর্যাদার পুলিশ কর্তারা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের বোঝাচ্ছেন ।প্রশাসনের তরফে পাট্টা বিলির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এত উদ্যোগেও নেভেনি ক্ষোভের আগুন। উল্টে শুক্রবার দেখা গেল শাহজাহান ঘনিষ্ঠের আলাঘরে আগুন ও বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা। গ্রামবাসীদের দাবি গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর নামে পুলিশ প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন।
বদলির আগে ডিআইজি বারাসত রেঞ্জের সুমিত কুমার বলেছিলেন," অশান্তি করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়ি গিয়ে তুলে নিয়ে আসা হবে। "শুক্রবার দুপুরে সন্দেশখালি গিয়ে ডিজি সন্দেশখালি সংক্ষিপ্ত সফরে গিয়ে বললেন, "যাঁরা আইন ভাঙার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ হবে।" সতর্ক করলেন সংবাদ মাধ্যমকেও।
শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করে সন্দেশখালির বেড়মজুর। মহিলারা ঝাঁটা- লাঠি হাতে রাস্তায় নামে।তাদের অভিযোগ অজিত মাইতির মত স্থানীয় তৃণমূল নেতারা দখল করেছে মাছের ভেড়ি।ফের যাতে ক্ষোভের আগুন নতুন করে জ্বলে না ওঠে তা সামলাতে দুদিন আগেই সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন ডিজি রাজীব কুমার। নিগৃহীত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। রাতে গ্রামে টহল দিয়ে রাত্রিযাপন করে বৃহস্পতিবার সকালে সন্দেশখালি ছাড়েন। তবুও শুক্রবার সকালে নতুন করে তপ্ত হয় সন্দেশখালি।
খবর পেয়ে প্রথমে এলাকায় পৌঁছে যান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার। বেড়মজুরে বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার সময় শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির বাড়িতে হামলা করে বেশ কিছু গ্রামবাসী । তার স্ত্রী-মেয়েকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ ওঠে। তখন পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়।এরই মধ্যে শনিবার সকালে সন্দেশখালিতে পৌঁছে যান ডিজি রাজীব কুমর। গ্রামে যেভাবে বাড়ি ভাঙচুর, আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটছে, তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ডিজি। তিনি বলেন, “যাঁরা আইন ভাঙার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ হবে।”
পাশাপাশি এদিন সংবাদমাধ্যমকেও সচেতন করলেন ডিজি। তিনি বলেন, "কালকে একটা জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামবাসীদের হাতে। পরেরদিন সংবাদমাধ্যমে সেখানে এমনভাবে দেখানো হল, যাতে গ্রামবাসীরা সেই জমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম যেন মানুষকে প্ররোচনা না দেন। যে আইন ভাঙবে, তার বিরুদ্ধে প্রথম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথাও আইনে এরকম নিয়ম নেই, যে আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, আমরা আইন ভাঙতে পারি। যারা বাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিতে বলব আমার অফিসারদের।”
ডিজি আরও বলেন, “যাঁদের ওপর অন্যায় হয়েছে, তাঁদের আমরা আশ্বস্ত করছি। আমরা ক্যাম্প শুরু করেছি। কালকেও অনেকে জমি পেয়েছেন। জেলাশাসকের তরফ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে অভিযোগ উঠছিল মহিলাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছিল। আমরা যখন ওই বিষয়টা দেখছি, তখন আবার বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে।”
জনরোষের এই ধরনের প্রতিফলনকে যে একেবারের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তা পরিষ্কার করে দেন ডিজি। সন্দেশখালির গ্রামবাসীরা পুলিশ কর্তাদের কাছে দাবি করে বলেন, মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
No comments:
Post a Comment