দিল্লী বিমানবন্দরে হুমকি মেল; কলকাতায় আটক বাংলাদেশি, চাঞ্চল্যকর তথ্য
কলকাতা , ০৫ মার্চ: দিল্লী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক (IGI) বিমানবন্দরে ভুয়া হুমকি মেল পাঠানোর অভিযোগে কলকাতা থেকে গ্রেফতার এক বাংলাদেশী নাগরিক। ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশী নাগরিকের নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। সোমবার কলকাতা পুলিশের তরফে এই কথা জানানো হয়েছে। তার ভারতীয় শ্যালক যাতে কলকাতায় এসে তার সাথে সাক্ষাৎ না করতে পারে সেই কারণেই ওই ফ্লাইট বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়েই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৫.১৫ মিনিট নাগাদ ওই হুমকি মেইল পাঠানো হয়।
ভুয়া মেল পাঠানোর অভিযোগে কলকাতা থেকে গ্রেফতারের পর ট্রানজিট রিমান্ডে নজরুল ইসলামকে দিল্লীতে আনা হয় এবং দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ জানায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি 'দিল্লী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড' (DIAL) বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তা আধিকারিকের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক (IGI) বিমানবন্দর থানায় একটি অভিযোগ আসে। যেখানে বলা হয়েছিল যে, বিমানবন্দরের ডিউটি ম্যানেজারের ইমেল আইডিতে একটি হুমকি ইমেল আসে, তাতে বলা হয় দিল্লী থেকে কলকাতা গামী একটি ফ্লাইটে কিছু নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। কোনও এক যাত্রী তার সাথে বিস্ফোরক নিয়ে ওই বিমানে যাচ্ছে। অতএব যাত্রীদের প্রতিটি ব্যাগ এবং লাগেজ পরীক্ষা করার জন্য যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।'
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং তার সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে, দিল্লী বিমানবন্দরকে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। পাশাপাশি দিল্লি বিমানবন্দর চত্বরজুড়ে সম্পূর্ণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। যদিও তন্নতন্ন করে অভিযান চালানোর পর জানা যায় ওই হুমকি ইমেলটি একটি ভুয়া ছিল।
তদন্তের সময় প্রেরকের ইমেল আইডি যাচাইয়ের পর জানা যায়, হুমকি মেইল পাঠানোর জন্যই নতুন আইডি খোলা হয়েছিল এবং হুমকি মেইল পাঠানোর মাত্র ১ ঘন্টা আগে ওই নতুন ইমেইলটি খোলা হয়।
দিল্লীর পুলিশ কমিশনার (ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) ঊষা রঙ্গনানি জানান, 'তদন্তের আরও গভীরে গিয়ে জানা যায় কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকার ক্লাসিক হোটেলের ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে ওই হুমকি মেইলটি পাঠানো হয়েছিল। সে সময় ওই হোটেলে প্রায় ৪০ জন অতিথি অবস্থান করছিলেন এবং তাদের সকলেই ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করছিলেন, যার মধ্যে আবার বেশিভাগই ছিল বাংলাদেশী নাগরিক।
ওই তথ্য সামনে আসার পরে ক্লাসিক হোটেলের ৪০ জন অতিথিকেই আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসা করে জানা যায় অমরদীপ কুমার নামে এক যাত্রী তার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে ওই হোটেলে আসেন।
ডেপুটি কমিশনার বলেন 'জিজ্ঞাসাবাদে অমরদীপ জানায়, সম্পর্কে তার জিজা (জামাইবাবু) মোঃ নজরুল ইসলাম গত প্রায় এক মাস ধরে ওই হোটেলে অবস্থান করছেন এবং তার সাথে দেখা করার জন্য অমরদীপ ওই হোটেলে আসেন। এরপর নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু মোবাইলের কললিস্ট'এর পুরো হিস্ট্রি ডিলিট করে দেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত বাংলাদেশি নজরুল ইসলাম পুলিশের কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে জানায় যে, তিনিই দিল্লী-কলকাতা ফ্লাইটটি বাতিল করার জন্য ওই হুমকি মেলটি পাঠিয়েছিলেন। কারণ তার শ্যালক অমরদীপ সেই ফ্লাইটে তার কাছে আসছিলেন এবং তিনি চাননি যে অমরদীপ এখানে আসুক এবং তার সাথে দেখা করুক।
নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা বাদ করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এর কারণ হিসেবে সে জানায় যে গত ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের লাভলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এয়ারলাইন্স, ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটির উপর একটি কোর্স করেছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয় পাঠরত অবস্থায় সোনিয়া নামে একটি মেয়ের পরিচয় হয় এবং পরে তাদের উভয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
কোর্স শেষ করার পরই, ২০২০ সালে তিনি বাংলাদেশ ফিরে যান। কিন্তু সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে সোনিয়ার সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন নজরুল। শুধু তাই নয়, মার্কিন ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন বলেও মিথ্যা কথা বলেন সোনিয়াকে।
নজরুলের মিথ্যা কথার জালে জড়িয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাকে বিয়ে করেন সোনিয়া। কিন্তু বিয়ের পরই নজরুলের কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্দেহ হয় সোনিয়ার, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য নজরুলকে চাপ দিতে থাকে সোনিয়া।
কিন্তু দিল্লীতে চলমান কৃষক আন্দোলনের কারণে কলকাতায় আটকে থাকার অজুহাত দেখিয়ে নজরুল তার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। স্বভাবতই এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সোনিয়া তার ভাই অমরদীপকে পাঞ্জাব থেকে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই পুলিশ কর্তা আরও জানায়, 'বাংলাদেশে ঋণের দায়ে ডুবেছিলেন নজরুল। ঋণের পরিমাণও কম নয়, প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ফলে ঋণদাতাদের এড়াতে তিনি ভারতে আত্মগোপন করেছিলেন।'
No comments:
Post a Comment