সন্দেশখালিতে ভুয়ো সন্দেশের দাবী মমতার - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday 8 March 2024

সন্দেশখালিতে ভুয়ো সন্দেশের দাবী মমতার

 


সন্দেশখালিতে ভুয়ো সন্দেশের দাবী মমতার 




কলকাতা: নারী নিগ্রহ এবং জুলুমের অভিযোগের জেরে সন্দেশখালির 'ঝড়' গোটা রাজ্যে উঠবে, বলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সেই ঘোষণার পরের দিন পথে নেমে সন্দেশখালিদ নিয়ে 'মিথ্যা প্রচারে'র অভিযোগের অনড় থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, "সন্দেশখালি নিয়ে অনেকে ভুয়ো সন্দেশ (সংবাদ) নিয়েছেন! সে ভাবে কয়েকটি ঘটনা নিয়ে হতেই পারে কিছু ঘটেছে। হাতের পাঁচ আঙুল তো সমান নয়!' তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, "যদি কোনও অন্যায় হয় এবং আমাদের নজরে আসে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করতে কার্পণ্য করি না!"


আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কলকাতায় কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা। মিছিলে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসেন সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নারী দিবস ৮ মার্চ হলেও সে দিন (শুক্রবার) শিবরাত্রি পড়ায় এক দিন আগেই এই কর্মসূচি নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।


শহরে তাঁর মিছিলের দিনই ফের সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিজেপির মহিলা সাংসদ, বিধায়ক-সহ নেত্রীরা। তাঁদের নিউ টাউনেই আটকে দিয়ে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। যার প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্ধ বিজেপি সাংসদ ও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নারী দিবস উপলক্ষে মিছিলে হাঁটছেন, সেটা মুখোশ! আর সন্দেশখালিতে যা হচ্ছে, সেটা মুখ। উনি মহিলাদের কথা বলেন। আর পুলিশ দিয়ে আমাদের জোর করে টেনে হিঁচড়ে থানায় তুলে নিয়ে যায়!"


বারাসতে বিজেপির মহিলা মোর্চা আয়োজিত 'নারী শক্তি সম্মান সমাবেশে' বুধবার এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সন্দেশখালির 'নির্যাতিতা' কয়েক জন মহিলা। তৃণমূলের মিছিলে এ দিন পাল্টা নিয়ে আসা হয়েছিল সন্দেশখালির কিছু মহিলাকে। যাঁরা দাবী করেছেন, ওখানে বিজেপি 'অন্যায় রাজনীতি' করছে। আর মিছিল শেষে ধর্মতলার সমাবেশে মমতা বলেছেন, "সন্দেশখালির মেয়েরাও এসেছেন সন্দেশ দিতে। অর্থাৎ মিষ্টি সংবাদ দিতে। আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।"


লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় নারী সুরক্ষা নিয়ে বারেবারেই সুর চড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতার এ দিন পাল্টা দাবী, "আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলা মহিলাদের জন্য নিরাপদতম। বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, হাথরসে বিচার হয় না। মণিপুরে যখন মহিলারা জ্বলছিলেন, মেয়েদের নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছিল, কোথায় ছিলেন বিজেপি নেতারা?" গুজরাতের বিলকিস বানো মামলার কথা তোলার পাশাপাশিই মমতার আরও বক্তব্য, "আপনারা মহিলা সম্মানের কথা বলেন। আর কুস্তিগিরদের নির্যাতন করার পরেও আপনার সাংসদকে ফেডারেশেনের চেয়ারম্যান রেখে দিলেন।"


বিজেপিকে 'পিন্টুবাবু' বলে কটাক্ষ করে মমতা এ দিন মন্তব্য করেছেন, "কী পিন্টুবাবু, এত রাগ কেন?" তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করার অভিযোগ ফের শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। সেই সঙ্গে রাজ্যে বারবার কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ করে মমতার হুঁশিয়ারি, "অন্য রাজ্যে ৪৫৫টা দল গেলে কী হত? ভদ্রতা করেছি। গাড়ি, খাবার, মিষ্টি, দই দিয়েছি। তাদের গালাগালি, বদনাম শুনেছি। তবু আমরা কারও গায়ে হাত দিইনি! বাংলা সৌজন্য জানে। কিন্তু এটাকে দুর্বলতা ভাববেন না!"


বিজেপির মহিলা দলের সন্দেশখালি-যাত্রা নিয়ে এদিন ধুন্ধুমার বেঁধেছিল নিড টাউনে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল, সাংসদ লকেট, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র, বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষেরা এ দিন বিশ্ববাংলা গেটের সামনে থেকে সন্দেশখালির দিকে রওনা হলে নিউ টাউনের হাটগাছি মোড়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। বাধা টপকে তাঁরা এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপির নেত্রীরা। পরে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে নিউ টাউন থানায় নিয়ে যায়। নেত্রীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মীরা থানার সামনে বসে পথ অবরোধ শুরু করেন। বিকেলে পরে নেত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। লকেট অভিযোগ করেছেন, "আমাদের ছ'ঘন্টা আটকে রাখা হল। জল, খাবার কিছুই দেয়নি। এটাই তৃণমূলের আমলে মহিলাদের প্রতি আচরণ!"


এই চাপানউতোরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সন্দেশখালির ঘটনাকে 'খাটো' করে দেখাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সুজনের মন্তব্য, "সেই পার্ক স্ট্রিটে 'সাজানো ঘটনা' দিয়ে শুরু হয়েছিল। কোনও সংবেদনশীলতা নেই। এখন যা বলছেন, মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ!"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad