একসময় সোনার গুঁড়ো মেশানো থাকতো বর্ধমানের মাটিতে! তুর্কি-আফগান-মুঘলদের সাম্রাজ্য ছিল বর্ধমান - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday 8 March 2024

একসময় সোনার গুঁড়ো মেশানো থাকতো বর্ধমানের মাটিতে! তুর্কি-আফগান-মুঘলদের সাম্রাজ্য ছিল বর্ধমান

 


একসময় সোনার গুঁড়ো মেশানো থাকতো বর্ধমানের মাটিতে! তুর্কি-আফগান-মুঘলদের সাম্রাজ্য ছিল বর্ধমান


 

বর্ধমান। এই বর্ধমান নামটা শুনলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সীতাভোগ আর মিহিদানার কথা। কিন্তু জানলে অবাক হবেন ব্রিটিশ আমলে এই বর্ধমানই ছিল বাংলার সবচেয়ে ধনী অঞ্চল। লোকে বলতো বর্ধমানের মাটিতে নাকি সোনার গুঁড়ো মিশে রয়েছে। এখানে একদিকে যেমন শস্যের ভাণ্ডার ছিল, তেমনই ছিল শিল্পের আস্তানা। এই বর্ধমানের ইতিহাসের কথা বলতে গেলে শুরু করতে হবে তুর্কি-আফগান রাজত্বকাল থেকে। ইতিহাসের এক বিরাট বড়ো অধ্যায়ের সাক্ষী বাংলার এই দুই জেলা। দুই জেলা কেন? কারণ এখন বর্ধমান মানে পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমান; এই দুই জেলাকেই বোঝায়। তাহলে চলুন ইতিহাসের হলদে পাতা থেকে দুই বর্ধমান জেলার চেনা অচেনা কাহিনীর সমস্তটা জানাই আপনাদের। 


ইতিহাসের চোরাগলি পেরিয়ে আজ অনেকটাই বদলে গেছে এই বর্ধমান। কিন্তু আজও ইতিহাসের গায়ে কান পাতলে শোনা যায় জৈনদের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর বার্ধামানা এই জেলার অষ্টিকা নামক একটি গ্রামে বেশ কিছুদিন ছিলেন। তাঁর নামেই অর্থাৎ বার্ধামানা থেকেই এই জনপদের নাম হয়েছিল বর্ধমান। আবার এও শোনা যায় মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বধ-ই-দিওয়ান থেকেই নামকরণ হয় বর্ধমানের। তবে অনেকে মনে করেন আর্য সভ্যতার বিকাশের সময় উন্নতি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বর্ধমান নামটি রাখা হয়েছিল। 


অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে দারুণ জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ার কারণে এই বর্ধমান জেলায় চাষবাস হতো দেখার মতো। সেই সময় বর্ধমানের বণিক কৃষ্ণরাম রায় ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে একটি ফরমান পেয়ে রাতারাতি বর্ধমানের জমিদার হয়ে উঠেছিলেন। ওই সময়ে বর্ধমানকে চাকলাও বলা হতো। কিন্তু ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় চাকলাগুলিকে ভালো করে পরিচালনা করার জন্য আকারে ছোট করে বর্ধমান জেলায় পরিণত করা হয়েছিল। আর সেই বর্ধমান জেলাকে ২০১৭ সালের ৭ই এপ্রিল প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমানে বিভক্ত করে দেওয়া হয়। 


আপনি যদি একত্রে ১০৮ খানা শিবমন্দির দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে পূর্ব বর্ধমান। পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাটে রয়েছে ১০৮ টি শিবমন্দির, যা প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। বলা হয় এরকম জাগ্রত শিবমন্দির গোটা দেশে আর কোথাও নেই, যেখানে পা রাখলেই নাকি আপনার সব মনস্কামনা পূরণ হতে বাধ্য। এছাড়াও রয়েছে কার্জন গেট, জি.টি রোড এবং বি.সি রোডের সংযোগস্থলে এই বিরাট তোরণটি তৈরি করেছিলেন খোদ বর্ধমানের মহারাজা। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় এই তোরণটির নাম কার্জন গেট রাখা হয়েছিল। বর্তমানে যার নাম অবশ্য বিজয়তোরণ। 


পূর্ব বর্ধমানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন ৫১ টি সতীপিঠের একটি পিঠ, মা মঙ্গল চণ্ডীর মন্দির। এছাড়া সাতদেউল যা প্রাচীন বাংলার জৈন কৃষ্টির এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। সেটিও রয়েছে বর্ধমানেই। পূর্ব বর্ধমানে রয়েছে ভালকিমাচা নামক এক ঘন জঙ্গল, যেখানে ভলু নামের এক রাজা মাচা তৈরি করে নিয়মিত শিকারে আসতেন। এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন একটি সুউচ্চ টাওয়ার যা বরগী আক্রমণের সময় তৈরি করা হয়েছিল। এক সময় যা ছিল বর্ধমান রাজবাড়ি, আজ তা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। 


তাছাড়া চকদীঘি রাজবাড়ি, বড়বাড়ি, ভেরিবাড়ি, মনিরামবাটি জমিদারবাড়ি, রানীমহল, জলমহল, মীর হাটের পূজো বাড়ি, দরিয়াপুরের ডোকরা শিল্প, কালনা রাজবাড়ি, চাঁদনী পার্ক, শের আফগানের সমাধি, সর্বমঙ্গলা মন্দির পূর্ব বর্ধমানের বুকে রয়েছে একের পর এক দর্শনীয় স্থান। পূর্ব বর্ধমানে রয়েছে বাংলার ল্যাংচা কারখানা শক্তিগড়। এখান থেকে ল্যাংচা, সীতাভোগ আর মিহিদানা কিনে তবেই বাড়ি ফিরবেন কিন্তু। 


এবার আসি পশ্চিম বর্ধমানে। পশ্চিম বর্ধমানের গড় জঙ্গল, যা হিন্দু পুরাণ মতে শক্তি আরাধনার এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কথিত আছে, এই গড় জঙ্গলেই প্রথম দূর্গা পূজা হয়েছিল। এছাড়া রয়েছে চুরুলিয়া, যেখানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন। রয়েছে মাইথন বাঁধ। এই বাঁধটিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হলেও এই বাধটির অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এছাড়াও রয়েছে ঘাঘড় বুড়ি যা আসানসোলের সবচেয়ে প্রাচীনতম জাগ্রত মন্দির। রয়েছে ইচ্ছাই ঘোষের দেউল যা টাওয়ার মন্দির নামেও পরিচিত। তাহলে কী ভাবছেন! একটা ছোট্ট উইকেন্ড হাতে নিয়ে বর্ধমানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বেন নাকি!

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad