'বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রেখা পাত্রকে চাইছি না,' সন্দেশখালির ভূমিকন্যার বিরুদ্ধে পোস্টার-বিক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালির মেয়েকে প্রার্থী করে বড়সড় চমক দিয়েছে বিজেপি। আর এবারে সেই ভূমিকন্যার বিরুদ্ধেই পোস্টার পড়ল সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রের একাংশে। এই ঘটনায় যদিও শাসক দলকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। অপরদিকে অভিযোগ অস্বীকার শাসক শিবিরের।
রবিবার বাংলার ১৯ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে পদ্ম শিবির। সেই তালিকায় রয়েছে রেখা পাত্রর নাম। এরপর সোমবার সকাল থেকেই সন্দেশখালি, পাত্র পাড়া, ত্রিমোহিনী এলাকায় রেখার বিরুদ্ধে পোস্টার দেখা যায়। একটি পোস্টারে লেখা, 'সন্দেশখালির আন্দোলনকারী মানুষেরা রেখা পাত্রকে চায় না।' অন্য আরেকটি পোস্টারে লেখা, 'বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রেখা পাত্রকে চাইছি না।' এর পাশাপাশি পোস্টার হাতে বিক্ষোভে সামিল হন মহিলারা।
তাঁদের দাবী, রেখা শিক্ষিত নয়, রাজনীতির কিছু বোঝে না। স্থানীয় বাসিন্দা তাপসী খলিত বলেন, 'আমরা অন্য মুখ চাই, রেখা পাত্রকে চাই না।' তিনি বলেন, 'শিক্ষিত এবং সবার সঙ্গে মিশতে পারবে এমন একজনকে চাই।' তাঁর কথায় এক্ষেত্রে সবার সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল। কারণ আন্দোলন সবাই মিলে করেছে, একা কেউ করেনি।'
মায়া দে নামে অপর একজন বলেন, 'আমরা রেখা পাত্রকে চাই না। আমাদের মধ্যে আরও আন্দোলনকারী আছে, তাদের মধ্যে কেউ হোক। রেখা পাত্র রাজনীতি সম্বন্ধে কিছু জানে না। ও বেশি শিক্ষিতও না। ঠিকঠাক সই করতে পারে না। সে কী করে এটা চালাবে!'
যদিও এই পোস্টার কাণ্ডের নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে মনে করছে পদ্ম শিবির। বসিরহাট বিজেপির সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, 'সন্দেশখালিতে তৃণমূল নৃশংসতার শিকার এবং সন্দেশখালিতে তৃণমূল বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী তপসিলি মহিলা মুখকে প্রার্থী করে বিজেপি যে সন্দেশখালি আন্দোলনকে সম্মান জানিয়েছে, তার ফলে তৃণমূল কংগ্রেস ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এই ধরণের অপরিণত মস্তিষ্কের পরিচয় দিয়ে পোস্টারিং করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এর কোনও প্রভাব নেই কারণ সন্দেশখালি বর্তমান তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতের বাইরে বেরিয়ে গেছে। সন্দেশখালির মানুষেরা সন্দেশখালিতে স্বাধীনতা উদযাপন করছে এবং তারা বিজেপির সঙ্গেই আছে।'
অপরদিকে বিজেপির অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের দাবী, এটা বিজেপি আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এই বিষয়ে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, 'রেখা পাত্র প্রার্থী হওয়ার পর বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকোটে উঠেছে। তৃণমূলের কাছে বিজেপি পার্টির প্রার্থী কে হল সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলাম, এবারে রেখা পাত্র প্রার্থী হওয়ায় ২০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, এই আসনে আমরা জিতব।' তাঁর কথায়, 'এই পোস্টার নামক যে অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো ঘটেছে, এটা বিজেপির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই।'
সন্দেশখালিতে নারী নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়ে প্রথম নজরে এসেছিলেন রেখা পাত্র। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে শিবু হাজরাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। পরে শিবুকে গ্রেফতারও করা হয়। সেই রেখাকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট আসনের প্রার্থী বাছাইয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত ৬ মার্চ বারাসতে সভা করতে এসে সন্দেশখালির কয়েক জন 'নির্যাতিতা' মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানেও নাকি ছিলেন রেখা। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীকে সন্দেশখালির ঘটনার বিবরণ দেন মহিলারা। সেই সময় ওই মহিলাদের কথা মন দিয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী। বসিরহাট আসনের জন্য তখনই রেখার কথা ভেবে রাখেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং অনেক কিছু ভেবেই রেখাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী।
বিজেপি চাইছে, তাঁকে সামনে রেখে গোটা রাজ্যে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগকে আরও তীব্র করা যাবে। বিজেপির ধারণা, শুধু বসিরহাটেই নয়, আসন্ন নির্বাচনে গোটা রাজ্যেই এর সুফল মিলবে। অথচ রেখাকে প্রার্থী করতেই বিক্ষোভের ছবি সন্দেশখালিতে। এমতাবস্থায় এই আসনে লড়াই বিজেপির জন্য যে খুব একটা সরল হবে না, সেকথাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
No comments:
Post a Comment