সন্দেশখালির মেয়েকে টিকিট, মাস্টারস্ট্রোক বিজেপির! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 25 March 2024

সন্দেশখালির মেয়েকে টিকিট, মাস্টারস্ট্রোক বিজেপির!


 সন্দেশখালির মেয়েকে টিকিট, মাস্টারস্ট্রোক বিজেপির!



কলকাতা: সন্দেশখালি কাণ্ডের পর রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেরও নজর ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট কেন্দ্রের দিকে। এ বার সেখানে 'সন্দেশখালির ভূমিকন্যা' রেখা পাত্রের ওপরে ভরসা রাখছে পদ্ম শিবির।


সন্দেশখালি থানার পাত্রপাড়ায় বাড়ি রেখার। স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। দুঃস্থ পরিবার। অল্প দিনের মধ্যেই সন্দেশখালির আন্দোলনকারী মহিলাদের 'মুখ' হয়ে উঠেছেন রেখা পাত্র। শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারের দাবীতে সন্দেশখালি জুড়ে যে প্রতিবাদ-আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, সেখানে সামনের সারিতে নিয়মিত দেখা গিয়েছে বছর পঁচিশের এই যুবতীকে। রেখার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই সন্দেশখালি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।


বিজেপি নেতা গণেশ ঘোষ বলেন, "এক জন মহিলা হিসেবে রেখা বসিরহাট কেন্দ্রে এগিয়ে থাকবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা সকলে তাঁর পাশে থেকে লড়াই করব।" রেখার কথায়, 'দল আমার ওপরে আস্থা রেখেছে, আমি সন্দেশখালির মহিলাদের নিয়ে এই আসনে লড়াইয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ব।"


তবে দলের এই সিদ্ধান্তে অ-খুশি সন্দেশখালির বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। বিজেপির সন্দেশখালি ২ ব্লক মহিলা মোর্চার এক বিশেষ পদাধিকারী বলেন, 'বিজেপির নামে অনেক দেওয়াল লেখা হয়েছিল, তা রাতেই মুছে ফেলা হবে। অনেক কর্মী- সমর্থক ক্ষিপ্ত। আমিও পদত্যাগ করতে পারি। এই প্রার্থীর কোনও যোগ্যতাই নেই সাংসদ হওয়ার। স্কুলের গণ্ডি পার করেননি।"


অপরদিকে বারাসত কেন্দ্রে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রে দলের বিধায়ক স্বপন মজুমদার। একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকারকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের পাল্লা এলাকায় বাড়ি তাঁর। ২০০৮ সালে তিনি পদ্ম শিবিরে যোগদান করেন। স্বপন এক সময়ে বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাসের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট হন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন স্বপন।



এর পাশাপাশি স্বপন 'মতুয়া মুখ' হিসাবেও পরিচিত। ২০১৬ সালেও তিনি বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সে বার অবশ্য পরাজিত হন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন নির্মাণ কাজের সুপারভাইজ়ার হিসেবে। দ্রুত লেবার কনট্রাক্টর হন। আমদানি- রফতানির ব্যবসা, নির্মাণ সংস্থা তৈরি করে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন।


বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কেন্দ্র সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারির পরে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এর ফলে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের সমর্থন থাকবে বিজেপির দিকে। সে কারণেই বিজেপি রাজনীতিতে 'মতুয়া মুখ' হিসাবে পরিচিত স্বপনকে এগিয়ে দেওয়া হল। 


স্বপনের দাবী, বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকায় মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষদের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও স্বপনের নিবিড় যোগাযোগ আছে। তিনি অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।


অবশ্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, বিজেপি বারাসত কেন্দ্রে প্রার্থী খুঁজে না পাওয়ায় বাইরে থেকে প্রার্থী আনতে হয়েছে। দলের অন্দরেও সকলে এই সিদ্ধান্তে খুশি নন। বারাসতের এক বিজেপি নেতার কথায়, "স্বপন প্রার্থী হওয়ায় আমাদের লড়াইটা অনেক কঠিন হয়ে গেল। স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করা হলে জয় নিয়ে ভাবতে হত না।"


উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, "বিজেপি মতুয়াদের ভাঁওতা দিয়েছে। নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে সিএএ আইনে শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে, যা মতুয়াদের ডিটেনশন ক্যাম্পে তাকানোর জন্য যথেষ্ট। মতুয়াদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। ফলে বিজেপি কাকে প্রার্থী করল, সেটা কোনও বিষয় নয়।" 


সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, "কে পুরুষ, কে মহিলা, কে হিন্দু, কে কায়স্থ, কে ব্রাহ্মণ- এ সব দেখে ভোট হয় না। ভোটের ক্ষেত্রে দলের নীতি বিবেচ্য হয়।"


প্রত্যাশিত ভাবেই ব্যারাকপুর থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অর্জুন সিং। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় জায়গা না পেয়ে ফুঁসে উঠেছিলেন শিল্পাঞ্চলের এই নেতা। তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ফেরেন পুরনো দল বিজেপিতে। রবিবার প্রার্থী তালিকায় নাম ঘোষণা হয়েছে তাঁর। অর্জুন বলেন, "এক বার ভুল করেছিলাম অন্যকে বিশ্বাস করে, আর নয়। বিজেপি নিয়মনিষ্ঠ দল। দলের নির্দেশ মেনে যা করার করব।" অন্য দিকে, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। তিনি বলেন, "বন্ধু যখন প্রার্থী হয়, শুভেচ্ছা ছাড়া আর কী-ই বা জানানোর থাকে।"


অপরদিকে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের এবার বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইত। তিনি দলের মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বে ছিলেন। মন্দিরবাজারের জগদীশপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের যুব বাংলায় এমএ-বিএড। একটি হাই স্কুলে বাংলা পড়ান তিনি। ২০০৮ সাল থেকে সক্রিয় ভাবে দল করছেন বলে জানান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad