সংস্কার শুরু হল বাংলার প্রাচীন নদীর
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৮ মার্চ: বহু প্রতীক্ষার পর প্রায় ১০ কিলোমিটার সুটি সংস্কারের পথে নামল পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতর।
১০০ বছর পর সুটি নদী সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করা হল। সুবর্ণরেখা তথা সুটি নদীর দীর্ঘ পথ বিস্তৃত বহু ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই নদীর সাথে। ধীরে ধীরে সেই নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। বারাসত এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের দাবী ছিল এই সুটি নদী সংস্কারের। বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে ক্ষতি হতো কৃষি জমির। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং রাজ্যের সেচ দফতরের উদ্যোগে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পালপাকুড়িয়া রেল ব্রিজ থেকে দিঘরা হাইস্কুল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার সুটি নদীর সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করা হল।
এদিন শুক্রবার এই উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বারাসত ব্লক ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হালিমা বিবি, পূর্ব খিলকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরিফ গাজি, সুটি সংস্কারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ব্যানার্জি সহ একাধিক বিশিষ্টজনেরা।
এই প্রসঙ্গে বারাসত ব্লক ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হালিমা বিবি বলেন, 'আমরা ভীষণ ভাবে গর্বিত। মানুষ অবশ্যই উপকৃত হবে। দীর্ঘ ১০০ বছর এখানে সুটি সংস্কার হয়নি। আমরা এখান থেকে বারবার দাবী করেছি, জলের কারণে চাষীদের অনেক সময় চাষবাস বন্ধ হয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায় এবং জল পাস না হওয়ার কারণে এখানকার বেশ কিছু নীচু এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। আমরা আশাবাদী সুটি সংস্কার হয়ে গেলে এই জল দ্রুত নামবে এবং ওয়াটার লগিংয়ের হাত থেকে আমরা রেহাই পাব।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও আমরা এখানে দেখি জলজমার কারণে ডেঙ্গু থেকে শুরু করে পতঙ্গবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া ফাইলেরিয়া বিভিন্ন রকম সমস্যা আসে। বিগত দু'বছরে প্রচুর মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এগুলো এবং এখানে জলজমার সমস্যাটা থেকে যে আমরা রেহাই পাব তার উদ্যোক্তা আমাদের খাদ্যমন্ত্রী। ওনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজকের এই সুযোগ আমরা পেয়েছি এবং সেচ দফতরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলেই উনি এই কাজটা করতে পেরেছেন।'
সংস্কারের পথে অনেকগুলো বাড়ি কেটে যাচ্ছে তাদের জন্য কী ব্যবস্থা? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যারা বাড়ি করেছিলেন তারা সুটির জমিতেই বাড়ি করেছিলেন। ওনাদের দায়িত্ব ওটা ক্লিয়ার করে নেওয়ার। কারণ আমরা কারও ব্যক্তিগত জমি কাটছি না যে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। তবে কারও কোনও আপত্তি থাকলে তারা লিখিত আকারে প্রধানকে জানাবেন। কিন্তু বিক্ষোভ করার মত জায়গা নেই। কারণ আমরা কারও ব্যক্তিগত জায়গা নিচ্ছি না।'
পূর্ব খিলকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরিফ গাজি বলেন, 'আমরা আনন্দিত। কারণ যেভাবে এখানে জল নিয়ে সমস্যা হয় বর্ষার সময়, চাষীদের যে সমস্যাটা হয়। ধান চাষ ছাড়া কোন সবজি চাষ চাষিরা করতে পারেন না জল বেঁধে গেলে। এই খালটা সংস্কার হলে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো হবে। জল নিকাশির ব্যবস্থা ভালো হলে চাষগুলো ভালো হবে। এছাড়া মশা মাছির আমদানি ডেঙ্গু নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা থেকে আমরা রেহাই পাব।'
ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ব্যানার্জি জানান, পালপুকুড়িয়া রেলের যে কর্লভাট আছে ওখান থেকে দিঘরা হাইস্কুল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এখন কাটা হবে। তিনি জানান, ২ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই কাজ হচ্ছে। এটা নীচে ছয় মিটার বা ১৯ ফুট আর ওপরে স্লগ ধরলে ৪৮-৫২ ফুটের মধ্যে হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment