গ্ৰিনল্যান্ডের গলা বরফ নিয়ে কেন লড়াই করছে চীন-আমেরিকা? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 25 March 2024

গ্ৰিনল্যান্ডের গলা বরফ নিয়ে কেন লড়াই করছে চীন-আমেরিকা?


গ্ৰিনল্যান্ডের গলা বরফ নিয়ে কেন লড়াই করছে চীন-আমেরিকা? 



প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৫ মার্চ: ১৯৮০ সালের পরে, বিশ্বজুড়ে তুষারপাত দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এর জন্য দায়ী করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনকে। গত কয়েক দশক ধরে, বৈশ্বিক উষ্ণতা সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আবহাওয়া ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা সামনে এসেছে, যেখানে দাবী করা হয়েছে যে এখন গ্রিনল্যান্ডেও আশঙ্কাজনক হারে বরফ গলে যাচ্ছে।


নেচার জেনারেলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গ্রিনল্যান্ড প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় এখানে ৩ কোটি টন বরফ গলে জলের রূপ নিচ্ছে।


তাদের গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ১৯৮০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এই অঞ্চলের প্রতিটি হিমবাহ গত কয়েক দশকে পাতলা হয়ে গেছে এবং এর প্রভাব বৈশ্বিক পর্যায়ে দেখা যায়।


এমন পরিস্থিতিতে, কেন গ্রিনল্যান্ডের বরফ এত দ্রুত গলে যাচ্ছে এবং আমাদের উপর কী প্রভাব ফেলবে সেই প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।


 প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক গ্রিনল্যান্ড কি?

গ্রিনল্যান্ড ২,১৬৬,০৮৬ বর্গ কিমি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি পৃথিবীর উত্তর মেরুতে অবস্থিত। মাত্র ৫৬ হাজার মানুষ এই দেশে বাস করেন এবং এটি ১২ মাস ধরে বরফে ঢাকা থাকে। তবে গত কয়েক বছরে এখানে উপস্থিত তুষার গলছে এবং কমছে। গ্রীনল্যান্ডে অনেক বড় বড় বরফের পাহাড় এবং হিমবাহ রয়েছে, যার গলে যাওয়া বিশ্বের জন্য বিপদ।


বরফ গলায় অন্যান্য দেশের ওপর প্রভাব কী হবে?

জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্সের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডে দ্রুত বরফ গলে যাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং মেরু অঞ্চলের হিমবাহের গলন একই গতিতে চলতে থাকলে অনেক আগামী কয়েক বছরে উপকূলীয় দেশ জলে ডুবে যাওয়ার পথে পৌঁছে যাবে।


গ্রিনল্যান্ডের আশেপাশের দেশগুলো সম্পর্কে জানুন

গ্রিনল্যান্ড উত্তর মেরুর খুব কাছে। একদিকে আমেরিকা, কানাডার মতো দেশ এবং অন্যদিকে রাশিয়া, নরওয়ে ও সুইডেনের মতো দেশ। আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল তখন আমেরিকা এখানে তাদের প্রথম সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। কিন্তু এই ঠাণ্ডা শেষ হওয়ার পর এই জায়গাটার দিকে কেউ নজর দেয়নি।


 কতটা গলেছে তুষার 

গবেষকদের মতে, গত তিন দশকে গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ২৮,৭০৭ বর্গকিলোমিটার বরফ গলে গেছে। এই গলিত বরফ গ্রিনল্যান্ডের মোট বরফ এবং হিমবাহের প্রায় ১.৬ শতাংশ। এটাকে আরও সহজ ভাষায় বুঝতে হলে গ্রিনল্যান্ডে গত তিন দশকে যে পরিমাণ বরফ গলেছে তা আলবেনিয়ার আকারের সমান। এখন অনেক এলাকা আছে যেখানে আগে তুষারপাত হতো, কিন্তু সেই একই এলাকায় এখন অনুর্বর পাথর ও ঝোপঝাড় জন্মেছে।


এসব কারণেও বিশ্বের নজর গ্রিনল্যান্ডের দিকে

এখন গ্রিনল্যান্ডের গলিত হিমবাহ পৃথিবীর জন্য ভালো না হলেও, এই সময়ে গ্রিনল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য খুবই ভালো সুযোগ। কারণ গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলে গেলে এখান থেকে নতুন বাণিজ্য পথ খুলে যাবে। বরফ গলে জাহাজের যাতায়াতের সময় কমবে। এর পাশাপাশি এসব এলাকায় খননও করা যেতে পারে।


গ্রিনল্যান্ডের বিশাল উপকূলরেখার কারণে এখানকার মাছ ধরার শিল্পও বেশ বড়। এখানে অনেক বড় বড় বন্দর রয়েছে এবং মাটির নিচে কয়লার মজুদ রয়েছে।


কেন আমেরিকা ও চীন গলা বরফ নিয়ে লড়াই করছে?

বলা হয় যে ১৭টি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি একটি দুর্লভ খনিজ গ্রিনল্যান্ডে পাওয়া যায়, যা ইলেকট্রনিক্স ও অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ইউরেনিয়ামের ষষ্ঠ বৃহত্তম মজুদও রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। কোয়েনফিল্ড খনির মালিক গ্রিনল্যান্ড মিনারেলস কোম্পানি বলছে যে, বিরল খনিজটির কারণে এই খনিটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকারী হয়ে উঠতে পারে।


অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি গ্রিনল্যান্ড মিনারেলসকে চীনের সমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকাও এখানে বিনিয়োগ করতে চায়। অন্যান্য দেশগুলিও খনিজের জন্য গ্রিনল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। গ্রিনল্যান্ড মূল্যবান খনিজ পদার্থে সজ্জিত, যার লাভ বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্য বাড়ানোর জন্য করা যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad