লাখ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে ভিখারিদের চিকিৎসা করেন এই ডাক্তার - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 3 April 2024

লাখ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে ভিখারিদের চিকিৎসা করেন এই ডাক্তার


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৩রা এপ্রিল, কলকাতা : লাখ লাখ টাকার চাকরী ছেড়ে ভিখারিদের চিকিৎসা করেন এই ডাক্তার


পাঁচ লাখ টাকার মাইনের চাকরি ছেড়ে বিগত ৯ বছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিখারিদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন এই ডাক্তারবাবু। নাম অভিজিৎ সোনাওয়ান। যার সাদা জামার গায়ে ইংরেজিতে লেখা Doctor For Beggars. গরিব দুঃখীদের কাছে যে মানুষটা স্বয়ং মনুষ্যরূপী ভগবান। পুনের এক নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে বড় হয়েছেন অভিজিৎ বাবু। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী থাকার দরুন কষ্ট করে পাশ করেছেন ডাক্তারি। ডাক্তারি পাশ করলেও নিজের একটা চেম্বার খোলার মত পয়সা ছিল না তার কাছে। অভিজিৎ বাবুর বন্ধুরা যখন ডাক্তারি পাস করে বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যস্ত, সেইসময় অভিজিৎ বাবু রোজ সকালে লোকের দরজায় দরজায় ঘুরে ডাক্তারি করতেন। লোকের দরজা ঠেলে জিজ্ঞেস করতেন কোনো পেসেন্ট আছে কিনা। ভিজিট নিতেন মাত্র ৫ টাকা। আর আজ সেই মানুষটাই অসহায় মানুষগুলোকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্বাবলম্বী হবার পথ দেখাচ্ছেন। এত অভাবের ঘর থেকে উঠে এসেও একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঁচ লাখ টাকা মাইনের চাকরি এবং বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে আজ অভিজিৎ বাবু হয়ে উঠেছেন দুঃস্থ মানুষগুলোর ভরসার খুঁটি। কিন্তু কিভাবে? এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।


যার কেউ নেই তার সৃষ্টিকর্তা নয়, ভিক্ষুকদের ডাক্তার অভিজিৎ বাবু আছেন। যে মানুষটার সময়-অসময়ে দরকারে-অদরকারে রাস্তার ভিক্ষাবৃত্তি করা মানুষগুলোর অসুস্থতার খবর শুনলেই দু চাকার বাহন নিয়ে তাড়াতাড়ি হাজির হয়ে যান তাদের কাছে। ছোটবেলা থেকেই অভাব দেখে বড় হয়েছেন অভিজিৎ বাবু। নানান বাধা বিপত্তি পার করে যখন একটা ভালো চাকরি পেলেন তখন অভিজিৎ সোনাওয়ালকে আর পায় কে! একের পর এক প্রমোশন আর বিলাসবহুল জীবনের হাতছানি। ছোটবেলা থেকে এমনই তো একটা জীবন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাসে ৫ লাখ টাকা মাইনে পেয়েও শান্তি পেতেন না অভিজিৎ বাবু। তার সবসময় মনে পড়তো তার বাবার বলা কথাগুলো। 'সকলে তো টাকা কামায় বড়লোক হয়, তুমি না হয় আশীর্বাদ কামিও মানুষ হয়ো।' এরপরেই চাকরি ছেড়ে রাস্তায় নামেন অভিজিৎ বাবু। ২০১৫ সাল থেকে পুনে চিঞ্চুয়ারের সমস্ত জায়গা ঘুরে ঘুরে দুঃস্থ মানুষদের

সেবা করতে শুরু করেন তিনি। শহরের ফুটপাত, রেলস্টেশন, রেস্তোরাঁ, মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবকিছুর বাইরে বসে থাকা প্রতিটি ভিক্ষুককে নিজের দায়িত্বে চিকিৎসা করেন অভিজিৎ বাবু। প্রতিটা ভিক্ষুকের কাছে গিয়ে তাদের দরকারি ওষুধ পত্র থেকে শুরু করে  হাসপাতালে ভর্তি করা, সবটাই একার হাতে সামলান তিনি। 


২০১৫ সালে অভিজিৎ বাবু 'সোশ্যাল হেল্থ অ্যান্ড মেডিসিন' নামে একটি ট্রাস্ট শুরু করেন। এবং সকলের কাছে আবেদন জানান ভিক্ষুকদের ভিক্ষা না দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করতে এগিয়ে আসার জন্য। অভিজিৎ বাবু মাসের ১৫ দিন সোম থেকে শনি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ান পুনে এবং চিঞ্চওয়াড়ের প্রায় ৭টি জায়গায়। যেখানে প্রায় ১১০০ ভিক্ষুককে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন তিনি। 


শুধু তাই নয় অভিজিৎ বাবুর সংস্থা 'সোহম' প্রায় ৫২ জন ভিক্ষুক শিশুর লেখাপড়ার সম্পূর্ণ খরচ বহন করে। শুনলে অবাক হবেন চিকিৎসার পাশাপাশি ভিক্ষুকরা যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাদের ওজন মেশিন কিনে দেন অভিজিৎ বাবু। এছাড়া বহু ভিক্ষুক মেয়েদের তিনি কিনে দিয়েছেন সেলাই মেশিন। আজ অভিজিৎবাবুর এই উদ্যোগে ১৬৫ জন গরিব মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। তারা কেউ আর ভিক্ষে করে না। ভাবতে পারছেন অভিজিৎ বাবুর এই অবদানটা! অভিজিৎ বাবু হয়তো ৫ লাখ টাকার মাইনে পেয়ে খুব আরামে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি তা করেন নি। আর ঠিক এই কারণেই তিনি সবার থেকে আলাদা। আপনি ভালো থাকুন অভিজিৎ বাবু। আপনার মতো মানুষেরা ভালো থাকলেই সমাজের দুস্থ মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটে উঠবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad