পুকুরে মাছ চাষের কিছু সমস্যা ও সমাধানের উপায়
রিয়া ঘোষ, ১৭ মে : পুকুরে মাছ চাষে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। জল দূষিত হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস তৈরিসহ নানা সমস্যায় মাছে নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যায়। এসব সমস্যা ওঠার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
খাবি খাওয়া
অক্সিজেনের অভাবে মাছ জলে খাবি খায়। জলের উপর ভাসছে। মাছ খুব ক্লান্ত দেখায়। বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। ১ কেজি চুন এবং ১০০% কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে।
কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে জল দূষণ:
জলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়লে মাছের শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খাওয়াটা ওষুধের মতো। তবে মাছ ছাড়ার আগে পুকুর নির্মাণের সময় অতিরিক্ত স্লাজ অপসারণ করতে হবে।
অ্যামোনিয়া সংক্রান্ত সমস্যা:
অ্যামোনিয়া বাড়লে জলের রং তামা বা কালো হয়ে যায়। মাছ মজুদের ঘনত্ব কমাতে হবে। সাময়িকভাবে সার ও খাবারের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নতুন জল সরবরাহ করতে হবে।
নাইট্রোজেন সংক্রান্ত সমস্যা:
নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের শরীরে অক্সিজেনের সঞ্চালন ব্যাহত হয়। বিষক্রিয়া ঘটায়। মাছের শরীর বাদামী। মাছগুলো খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
চিকিৎসা:
মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম/লিটার হারে লবণ যোগ করতে হবে।
pH সম্পর্কিত সমস্যা:
জলের পিএইচ বা অম্লতা কমে গেলে মাছের শরীর থেকে প্রচুর আঠালো পদার্থ বের হয়। মাছ কম খাবার খায়। উচ্চ পিএইচ প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন এবং মাছের খাদ্যের চাহিদা হ্রাস করে। শরীর ভঙ্গুর হয়ে যায়। মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা:
পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১-২ কেজি/শতাংশ যোগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে তেঁতুল বা সজনা গাছের ডাল পুকুরে তিন থেকে চার দিন ভিজিয়ে রেখে তারপর তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল জলে দ্রবীভূত করা যায়।
জলের উপর সবুজ স্তর:
পুকুরের জলের রং গাঢ় সবুজ হয়ে গেলে বা জলে শেওলা থাকলে খাদ্য ও সার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ১২-১৫ গ্রাম তুঁত বা কপার সালফেট ছোট পাত্রে বিলি করে বেঁধে দিতে হবে। প্রতি শতাংশে ৮০০-১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
জলের উপর লাল স্তর:
পুকুরের জলে লাল আস্তরণ পড়লে ধানের খড় বা শুকনো কলাগাছের পাতা দড়িতে মুড়িয়ে জলে ভাসিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
জলের ময়লা:
জল নোংরা থাকলে মাছ কম খায়, দেখতে পায় না, প্রাকৃতিক খাবার পায় না, প্রজনন সমস্যা ও রোগ বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০-১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর নির্মাণের সময় জৈব পদার্থ যোগ করলে ময়লা স্থায়ীভাবে দূর হয়। কলা পাতা ও কচুরিপান রাখলেও ঘোলা কমে যায়।
No comments:
Post a Comment