ফুলশয্যার রাতে স-হবাসে না, স্বামীর সঙ্গে শা-রীরিক সম্পর্কে করতে না চাওয়া নিষ্ঠুরতা! বলল হাইকোর্ট
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২০ জুন: স্ত্রীয়ের তাঁর স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে অস্বীকার করা স্বামীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, এমনই মন্তব্য মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের। হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শীল নাগু এবং বিচারপতি অমর নাথ কেশরওয়ানির একটি বেঞ্চ বিবাহবিচ্ছেদের জন্য স্বামীর আবেদনের অনুমতি দেওয়া পারিবারিক আদালতের আদেশ বহাল রেখে এই মন্তব্য করেছে। পারিবারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন স্ত্রী।
উল্লেখ্য, আবেদনকারী (স্বামী) ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সাতনার পারিবারিক আদালতে স্ত্রীর নিষ্ঠুরতা এবং পরিত্যাগের ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। পিটিশনে স্বামী বলেছিলেন, ২৬ মে, ২০১৩ সালে হিন্দু রীতি অনুযায়ী তাঁর বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু প্রথম রাতেই স্ত্রী তাঁর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে অস্বীকার করে। তিনি আরও জানান, তাঁর স্ত্রী তাঁকে পছন্দ করেন না। বাবা-মায়ের চাপে তাঁর স্ত্রী বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের তিন দিন পর ২০১৩ সালের ২৯ মে স্ত্রীর ভাই তার বাড়িতে আসেন এবং তাঁর স্ত্রীকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। পরদিন স্ত্রীকে আনতে তাঁর বাড়িতে গেলে তাঁর বাবা-মা তাকে পাঠাতে অস্বীকার করেন। এরপর থেকে তাঁর স্ত্রী আর ফিরে আসেননি।
অন্যদিকে, স্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর স্বামীর সাথে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক ২৮ মে, ২০১৩ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এই লোকেরা যৌতুক হিসেবে দেড় লাখ টাকা ও একটি অল্টো গাড়ি দাবী করছিলেন। তিনি দাবী করেছিলেন, তার পরীক্ষা জুন ২০১৩ পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল, তাই তিনি তার বৈবাহিক বাড়িতে যেতে পারেননি। এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও যৌতুক দাবী করতে থাকে। এরপর আর স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিতে আসেনি।
স্ত্রী আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে রাজি থাকলেও যৌতুকের দাবীর কারণে তিনি দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। এসব কারণে তিনি স্বামীর দায়ের করা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করার জন্য প্রার্থনা করেন। প্রধান বিচারপতি, পারিবারিক আদালত, সাতনা উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে বিবাহবিচ্ছেদের আদেশ দেন।
লাইভ ল’র প্রতিবেদন অনুসারে, পারিবারিক আদালতের আদেশকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন স্ত্রী। স্ত্রী জানান, যৌতুকের দাবীর চাপে এবং তাঁর স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দ্বারা তাঁর প্রতি অশোভন আচরণের কারণে তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করছেন। তিনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে ছেড়ে যাননি।
অন্যদিকে স্বামী জানান, তাঁর বিরুদ্ধে যৌতুকের মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী। বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী মাত্র তিন দিন তাঁর শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। এরপর কোনও কারণ ছাড়াই তিনি তাঁর শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে তারা আলাদা থাকছেন। তাই পারিবারিক আদালতের আদেশ যথাযথ ছিল।
মামলার রেকর্ড এবং পক্ষের যুক্তি বিবেচনা করে আদালত বলেছে যে, স্ত্রী স্বীকার করেছিলেন যে, বিয়ের পরে তিনি মাত্র তিন দিন তার শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। তাঁর স্বামীর পরিবারের লোকজন তাঁকে আসতে বললেও তিনি আর ফিরে আসেনি। আদালত আরও বলেছে যে, তিনি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিধি (এমপি) এর আদালতের সামনে সত্যটি স্বীকার করেছেন যে, আপিলকারী এবং বিবাদীদের (স্বামী ও স্ত্রী) মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
আদালত বলেন, স্বামীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয় যে, প্রথম রাতেই আপিলকারী (স্ত্রী) বিবাদীর (স্বামী) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে অস্বীকার করেছিলেন স্বামীর প্রতি নিষ্ঠুরতা।
আদালত বলে, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে স্ত্রী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে মাত্র ৩ দিন ছিলেন। এ সময় দুজনের মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। এরপর থেকে প্রায় ১১ বছর হয়ে গেছে, স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকছেন। আদালত বলেন, উভয় পক্ষই আলাদা হয়ে গেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ চলছে। এমতাবস্থায় পারিবারিক আদালতের সিদ্ধান্ত ও আদেশে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। আদালত স্ত্রীর আবেদন খারিজ করে দেন।
No comments:
Post a Comment