হাসিনা সরকারকে ওল্টাতে ছাত্র আন্দোলনকে আরব স্প্রিং ভেবে খেলায় নেমেছে বিএনপি-জামাত, কড়া নজর দিল্লীর
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২০ জুলাই: ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৫ । শুক্রবার রাত থেকে বাংলাদেশে জুড়ে জারি হয়েছে কারফিউ। নামানো হয়েছে সেনা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে ভারতে ফিরে আসছেন বাংলাদেশে পাঠরত ত্রিপুরা মেঘালয় এবং পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়ারা।
অন্যদিকে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের নেতৃত্ব সরকারের আলোচনা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর সমস্যা সমাধানের যাবতীয় ভার এখন বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ওপর। আদালতে শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ কোটা কমানোর কথা ভাবছে। বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোঃ আলী আরাফাত বলেছেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি ও ছেলেরা গত পাঁচ বছরে গড়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ কোটা পূরণ করেছেন। তারা পরীক্ষা দিয়ে মেধার ভিত্তিতে কৃতকার্য হওয়ার পরেই কোটায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, এমনকি কোথায় অপূর্ণ পদগুলিতে সাধারণ প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমে ১৫ বা ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিতে চলেছে সরকার। বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব মনে করছেন এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের আর যৌক্তিকতা থাকবে না। ছাত্ররা রাস্তা ছাড়বেন।
বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতা আন্দোলনের জন্য দায়ী করা হয়েছে বিএনপি ও জামাতকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ইসলামিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছে। পুলিশের দাবী, জামাতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিলে এই নাশকতা করেছে, সঙ্গে উস্কানি দিয়েছে বিএনপিও। শুক্রবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেছেন, 'আমরা অরাজনৈতিক, কোটা সংস্কার আমাদের একমাত্র দাবী। কোথাও জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুরকে আমরা সমর্থন করছি না। যারা এসব করছে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দাবী, কোটা সংস্কারের দাবীতে ছাত্র আন্দোলনকে আরও স্প্রিং ভেবে নিয়ে বিএনপি জামাত সরকার ওল্টানোর খেলায় নেমে পড়েছিল। আন্তর্জাতিক মৌলতারা যোগাযোগ শুরু করেছিল বলেও দাবী করেছে গোয়েন্দারা। রবিবার শুরু হওয়া আদালতে শুনানি ভরসা এখন হাসিনা সরকারের।
অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই অস্থিরতার দিকে নজর রেখেছে নয়াদিল্লী। তবে তারা আগ বাড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ বা মন্তব্য করতে চায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলেই শাসক আওয়ামী লীগ আইএসআইয়ের মদদ প্রাপ্ত জামাতের দিকে আঙুল তোলার এই প্রবণতাকে এবার চোখ বুজে মানতে চাইছে না দিল্লী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মানতে না চাওয়ার পিছনে রয়েছে কূটনৈতিক দেনা পাওনার সমীকরণ।
শেখ হাসিনা সরকারের সাম্প্রতিক চীনা তাস খেলা, তিস্তা মহা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহের কথা সামনে নিয়ে আসা এবং সর্বোপরি শেখ হাসিনার কিছু মন্ত্রীর চীনপন্থী প্রবণতাকে তির্যকভাবেই দেখছে ভারত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবী, এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লী ঢাকার পাশে থাকার বার্তায় দিয়েছে সেই সঙ্গে নিজেদের কিছু দাবী তালিকাও পাঠানোর কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।
দিল্লী ভাবছে এই মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে প্রকাশ্যে হাসিনা সরকারের পাশে দাঁড়ালে বা এ দেশের সেনার সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করলে ছাত্রসমস্ততা বাংলাদেশ নাগরিকদের কাছে ভুল বার্তা গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। সূত্রের খবর, ঢাকা নেতৃত্বের ও নিরাপত্তা সংস্থার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করতে ভিতর থেকে চেষ্টা চলছে। যদিও এই দিনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণবীর জসওয়াল বলেছেন, 'এই ঘটনাকে সে দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছি।'
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বাংলাদেশের হিংসা ও আইনশৃঙ্খলা চূড়ান্ত অবনতি শুধু সে দেশের বিষয় হতে পারে না। তার প্রভাব ভারতের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জি-টুয়েন্টির প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শৃঙ্খলা বলেন, 'বাংলাদেশে যেভাবে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে তা খুবই উদ্বেগের।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বিষয়টি কোর্টের বিচারাধীন ও আশা করা যায় কোর্ট দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে কারণ কিছু ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে নন স্টেট অ্যাক্টররা মিশে গিয়ে হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন প্রয়োজন হিংসা নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি শান্ত করা।
কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবী, সম্প্রতি দু'বার ভারতে ঘুরে যাওয়া শেখ হাসিনা এই জটিল পরিস্থিতিতে নিজের সরকারকে সুরক্ষিত রাখতে পশ্চিমের সমালোচককে প্রতিহত করতে রাজনৈতিক সমর্থকের জন্য ভারতের দিকে তাকাতে বাধ্য। ভারত সে দেশে নিরাপত্তা সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি সংস্থার সঙ্গে আগাগোড়া যোগাযোগ রেখেছে। নন স্টেট এক্টররা যাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার সঙ্গে ভারত বিরোধিতাকে একই বন্ধনীতে আনতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকারি কাঠাময়ী কিছু সংস্কারের পরামর্শ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সাউথ ব্লক। যার মধ্যে অন্যতম চীনা পন্থী মন্ত্রীদের সরানো। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে শেখ হাসিনার প্রয়োজন তাঁর মন্ত্রী ও বাহিনীর কিছু অদল-বদল করা। দেশের পূর্ব বর্তমান অসন্তোষ হাসিনা সরকারের আগেই আঁচ করা উচিৎ ছিল। অসন্তোষ শুধু কোটা সংস্কারের দাবীকে ঘিরে নয়, দেশের ক্রমশ ফ্ল্যাট অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল বা আছে। নয়তো আজ পরিস্থিতির সামলে নিলেও কাল অন্য কিছু দিয়ে অশান্তি হতে পারে।
No comments:
Post a Comment