কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় শহীদ দার্জিলিংয়ের ব্রিজেশ, শোকস্তব্ধ পাহাড়
নিজস্ব প্রতিবেদন, ১৬ জুলাই, কলকাতা : দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ দার্জিলিংয়ের বীর ব্রিজেশ থাপা। সোমবার জম্মুর ডোডা জেলার দেশা জঙ্গলে তল্লাশি অভিযানের সময় এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে ব্রিজেশের শহীদ হওয়ার খবর পৌঁছে যায় দার্জিলিংয়ের লেবং-এ বড়াগিঙ্গের বাড়িতে। ব্রিজেশের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া।
জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় সোমবার গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পুলিশের সাথে যৌথ অভিযানে জড়িত চার সেনা জওয়ান শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা এবং তিনজন সেনা সদস্য রয়েছেন।
শহীদ ব্রিজেশ থাপার মা নীলিমা এএনআই-এর সাথে কথা বলার সময় তার ছেলে সম্পর্কে কথা বলেছেন। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহীদের মা নীলিমা বলেন যে একজন শহীদের মা হতে পেরে তিনি অবশ্যই গর্বিত, তবে আরেকটি সত্য যে তিনি এখন তার ছেলের থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বড় হয়েছেন ব্রিজেশ। বাবা ভুবনেশ থাপাও সেনাবাহিনীতে কর্নেল ছিলেন। সেই চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল ব্রিজেশের। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে পাঁচ বছর আগে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় জম্মুর ডোডা জেলার দেশা জঙ্গল এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় ভারতীয় সেনা। সেই অভিযানের লিডার ছিলেন ব্রিজেশ।
সেনার দিকে ছুটে যায় জঙ্গিরা। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা লড়াইয়ে ব্রিজেশ এবং অন্য তিন জওয়ান গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
তবে ছেলের মৃত্যুতে ব্যথিত ব্রিজেশের বাবা ভুবনেশ বলেছেন, "তার কোনও দুঃখ নেই।" তিনি বলেন, "আমার ছেলে দেশ রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে।"
ব্রিজেশের প্রাথমিক শিক্ষা দার্জিলিং এর লেবং-এ। বাবার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তিনি তার স্কুল-কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, মুম্বাই থেকে B.Tech শেষ করার পরে, তিনি কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস (CDS) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।এরপর তাকে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা আর্মি ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়।
বুধবার, একটি বিশেষ বিমানে ব্রিজেশের দেহ শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে আনা হবে। এর পরে, বাগডোগরা সামরিক ক্যাম্পে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। সেখান থেকে সড়কপথে তাঁর মরদেহ আনা হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, "সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সৈন্যরা সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
No comments:
Post a Comment