কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টের জলে ডুবে ৩ পড়ুয়ার মৃত্যু, মর্মান্তিক ঘটনার দায় কার?
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৮ জুলাই: আইএএস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টের জলে ডুবে ৩ পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৭ জুলাই) রাতে দিল্লীর ওল্ড রাজেন্দ্র নগরে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। কোচিং সেন্টারের লাইব্রেরিটি ভবনের বেসমেন্টে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছিলেন। টানা বৃষ্টিতে কোচিং সেন্টারের সামনের প্রধান সড়ক জলে ভরে যায়। আনুমানিক ৬:৩০ নাগাদ, রাস্তায় ভরে যাওয়া জল হঠাৎ করে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে ঢুকতে শুরু করে।
পুলিশ আধিকারিকদের মতে, বেসমেন্টে জল ঢোকার সময় সেখানে ৩৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে কোচিং সেন্টারের কর্মচারী ও সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বেসমেন্টে আটকে পড়া লোকজনকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করেন। বেশির ভাগ বের হতে পারলেও কেউ কেউ ভেতরে আটকা পড়েন। দ্রুতগতিতে জল ভরে যাওয়ায় পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ মিনিট পর উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট সম্পূর্ণ জলে ভরে যায়।
অন্ধকারের কারণে উদ্ধারকাজ বেশ বাধাগ্ৰস্ত হয়। পরিস্থিতি খারাপ হলে এনডিআরএফকে ডাকতে হয়। এনডিআরএফ পাম্পের সাহায্যে বেসমেন্ট থেকে জল বের করে আনতে শুরু করে। ডুবুরিরা তল্লাশি শুরু করলে ভেতরে তিনজনের মরদেহ পাওয়া যায়। আইএএস কোচিং সেন্টারে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, লাইব্রেরি ছাড়াও বেসমেন্টে একটি ক্লাস রুমও তৈরি করা হয়েছে। বেসমেন্টে ঢোকার ও বের হওয়ার একটাই পথ। কোচিং সেন্টারের ভবনটি প্রায় চারশ গজে নির্মিত। নিচতলায় পার্কিং আছে এবং চার তলায় ক্লাসরুম ছাড়াও অন্যান্য কাজের জন্য জায়গা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যতবারই বৃষ্টি হয় ততবারই কোচিং সেন্টারের সামনে ও বেসমেন্ট জলে ভরে যায়। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধানের জন্য কিছুই করা হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া বলেন, পুরাতন রাজেন্দ্র নগরের ৮০ শতাংশ কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরি রয়েছে। ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে এই জায়গা জলে ভরে যায়। এমসিডি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দিল্লীর আম আদমি পার্টি সরকার এই দুর্ঘটনার ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। দিল্লীর মন্ত্রী অতীশি বলেছেন, যাদের অবহেলায় এই ঘটনা ঘটেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছান দিল্লীর মেয়র শৈলি ওবেরয়ও। তিনি বলেন, এমসিডির দোষ ধরা পড়লে দোষী আধিকারিকদের রেহাই দেওয়া হবে না। ড্রেনের দেওয়াল ভেঙ্গে বা পাইপ ফেটে যাওয়ায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে।
অপরদিকে, ঘটনাস্থলে পৌঁছানো দিল্লী বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবা এবং নয়াদিল্লীর সাংসদ বাশুরি স্বরাজ দিল্লীর আম আদমি পার্টি সরকার এবং দিল্লীর এমসিডিকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাজেন্দ্র নগরের প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর রাজেশ ভাটিয়া কয়েক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় এলাকার ড্রেন পরিষ্কার না করার বিষয়টি তুলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, 'আমি স্থানীয় আম আদমি পার্টির বিধায়ক দুর্গেশ পাঠককে ড্রেনগুলি পরিষ্কার না হওয়ার বিষয়ে জানিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তাতে কোনও কর্ণপাত করেননি।' উল্লেখ্য, আম আদমি পার্টি দিল্লী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনেও ক্ষমতায় রয়েছে এবং দুর্গেশ পাঠক ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের এমসিডি ইনচার্জ। আপ বিধায়ক পাঠক এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং আশঙ্কা করেছেন যে, ড্রেন বা পাইপ ভাঙার কারণে বেসমেন্টটিতে জলে ভরে গিয়েছে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও রাজনীতি করা উচিৎ নয়।
দুর্গেশ পাঠক বলেন, আম আদমি পার্টি মাত্র এক বছর ধরে এমসিডিতে ক্ষমতায় রয়েছে। তার আগে ১৫ বছর ধরে এমসিডি বিজেপির নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৫ বছরেও কেন তারা পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেরামত করেনি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির কাছে। দিল্লীর পুরো সিবেজ লাইন এক বছরে মেরামত করা যাবে না। আমরা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করছি। আম আদমি পার্টির বিধায়ক বলেছেন, তদন্তের পরই দুর্ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে। এমসিডির গাফিলতি পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment